সখীপুর প্রতিনিধি: সখীপুর উপজেলা সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রায় পাঁচ বছর ধরে কোনো চিকিৎসক নেই। এ ছাড়া ওই চিকিৎসাকেন্দ্রে শৌচাগার থাকলেও পানি নেই। প্রায় তিন বছর ধরে শৌচাগারটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। চিকিৎসকসহ চারটি পদের বিপরীতে ওই হাসপাতালে মাত্র একজন ফার্মাসিস্ট দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে ওই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রোগীদের মানসম্মত সেবা দিতে পারছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা কর্মকর্তা, উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা, ফার্মাসিস্ট ও অফিস সহায়কসহ চারটি পদ থাকলেও শুধু একজন ফার্মাসিস্ট দিয়েই চলছে হাসপাতালটি। সাইফুল আলম নামের ওই ফার্মাসিস্ট প্রায় পাঁচ বছর ধরে চারজনের দায়িত্ব একাই পালন করছেন। ওই হাসপাতাল বন্ধ থাকবে ভেবে যোগদানের পর দুই বছরে এক দিনও ছুটি নিতে পারেননি তিনি। ফলে চিকিৎসক না থাকায় ওষুধ পেলেও চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।
এদিকে ওই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটি পানির পাম্প তিন বছর আগে চুরি হওয়ায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের শৌচাগারটি পানির অভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
ফার্মাসিস্ট সাইফুল আলম বলেন, দায়িত্ব পালনকালে শৌচাগার ব্যবহারের প্রয়োজন পড়লে তাঁকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র তালা দিয়ে পাশে অবস্থিত ব্যাংকে যেতে হয়। গত দুই বছরে তিনি একাধিকবার এ ধরনের সমস্যায় পড়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র আরও জানায়, সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সবশেষ নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল রতন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রেষণে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যোগ দেন। এর এক মাস পর উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা গুলশান আরা কনা তিনিও প্রেষণে পাশের বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। এ ছাড়া সাত বছর ধরে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অফিস সহায়কের পদ শূন্য রয়েছে। ফলে প্রায় পাঁচ বছর ধরে ফার্মাসিস্ট সাইফুল আলম হাসপাতাল ঝাড়ু দেওয়াসহ একাই সব দায়িত্ব পালন করছেন।
সাইফুল আলম বলেন, আইন অনুসারে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ফার্মাসিস্ট রোগীকে ওষুধ সরবরাহ করবেন। রোগীকে ওষুধ খাওয়ার নিয়ম বলে দেবেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বরাদ্দকৃত ওষুধ তাঁর হেফাজতে সংরক্ষিত থাকবে। রোগী দেখা বা রোগীর ব্যবস্থাপত্র লেখা তাঁর এখতিয়ার বহির্ভূত। হাসপাতাল ঝাড়ু দেওয়াও তাঁর কাজ নয়। অথচ তাঁকে একসঙ্গে রোগীও দেখতে হচ্ছে, আলমারি খুলে ওষুধ দেওয়াসহ প্রতিদিন হাসপাতালের দুটি কক্ষ, বারান্দা ও চারপাশ ঝাড়ুও দিতে হচ্ছে। প্রতিদিন তাঁকে ৫০ থেকে ৯০ রোগীকে সামাল দিতে হচ্ছে।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১০ মিনিট সময়ের মধ্যে ওই কেন্দ্রে সেবা নিতে ছয়জন নারী ও দুজন পুরুষ রোগী আসেন। রোগীদের দেখে মনে হলো তারা শুধু সাধারণ রোগের ওষুধের জন্য এসেছেন। রোগীরা আগে থেকেই জানেন এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কী কী ওষুধ পাওয়া যায়। এ সময় তাহমিনা নামের একজন এসে বললেন, সড়কে অটোরিকশা দাঁড়িয়ে আছে আমাকে ঝটপট গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট ও খাওয়ার স্যালাইন দেন। রোগীর কথা মতো সাইফুল আলম ওই রোগীকে পাঁচটি গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট ও তিন প্যাকেট খাওয়ার স্যালাইন দিয়ে বিদায় দিলেন।
এছাড়া, আবদুল বাছেদ ও মজনু মিয়া নামের দুই রোগীও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, প্যারাসিটামল ও আয়রন ট্যাবলেট চেয়ে নিয়ে গেলেন। মজনু মিয়া বলেন, আমি মাঝেমধ্যেই এই হাসপাতালে এসে প্রয়োজনীয় ছোটখাটো ওষুধ নিয়ে যাই। শিল্পী বেগম নামের এক রোগী বলেন, বড় হাসপাতালে রোগী বেশি। সেখানে লাইনে থেকে ডাক্তার দেখাতে হয়। এখানে লাইনের কোনো ঝামেলা নেই। তাই আমাদের জন্য এই ছোট হাসপাতালই ভালো।
সখীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাত লতিফ বলেন, প্রায় পাঁচ বছর ধরে হাসপাতালে চিকিৎসক নেই। শৌচাগার থাকলেও পানির অভাবে তা পরিত্যক্ত। এভাবে একটি হাসপাতাল চলতে পারে না। বিষয়টিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের একটু নজর দেওয়া দরকার।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, দুজন চিকিৎসক প্রেষণে চলে যাওয়ায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে বর্তমানে নানা সমস্যা চলছে। ওই দুই চিকিৎসকের প্রেষণ বাতিলের জন্য অধিদপ্তরে আবেদন দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে জরুরি ভিত্তিতে একজন চিকিৎসক দেওয়া হবে। এছাড়া নতুন একটি পানির পাম্প কেনার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। আশাকরছি শিগগিরই ওই হাসপাতালে পানির ব্যবস্থাও করা হবে।