নাগরপুরে যমুনা নদীতে বন্যার আগেই আগাম ভাঙন শুরু

নাগরপুরে যমুনা নদীতে বন্যার আগেই আগাম ভাঙন শুরু

নাগরপুর ফিচার

নাগরপুর প্রতিনিধি: নাগরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যমুনা নদীতে বন্যা শুরু আগেই আগাম ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক বসতবাড়ি ফসলি জমি যমুনার গর্ভে চলে গেছে। বুধবার থেকে সলিবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙিনায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছরই নাগরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভাঙনে শত শত ঘরবাড়ি যমুনার বুকে চলে যায়। বিশেষ করে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তিন ইউনিয়নের এলাকাগুলো হচ্ছে সলিমাবাদ ইউনিয়নের পাইসকা মাইঝাইল, খাস ঘুনিপাড়া, চর সলিমাবাদ ও ভূতের মোড়, ভারড়া ইউনিয়নের শাহজানী, মারমা ও উলাডাব এবং দপ্তিয়র ইউনিয়নের নিশ্চিতপুর, কাটি নিশ্চিতপুর ও বাক কাটারি। কয়েক বছর এসব এলাকার সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যমুনা বিলীন হয়েছে।

বুধবার (৭ জুন) বিকেলে সলিবাদ ইউনিয়নের সলিমাবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন স্কুলের অর্ধেক ভেঙে গেছে। এছাড়াও নতুন ভবনে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনরোধে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ গত ৩ মে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এ দিকে গত ২ জুন ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। এসময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু। ভাঙন রোধে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

সলিমাবাদ পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুল আওয়াল মোল্লা বলেন, আমাদের এলাকায় ভাঙনরোধে শুকনো মৌসুমে যদি বøক বা বেরীবাঁধ করা হতো তাহলে গ্রামের শত শত মানুষের অনেক উপকার হতো। এছাড়াও আসন্ন বন্যা শুরু আগে স্কুলটি ক্ষতির মুখে পড়তো না।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আখিরুল বলেন, সলিবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ভুতের মোড় পর্যন্ত এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্কুলের অর্ধেক প্রায় নদীতে চলে গেছে।

সলিবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ বলেন, বুধবার বিকেলের দুই ঘন্টার ভাঙনে বিদ্যালয়ের টয়লেট ও স্কুল ভবনের এককক্ষ চলে গেছে। বিদ্যালয়ের সরাঞ্জামগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়েছে। ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও স্থায়ী কোন সমাধান হবে না। স্থায়ী সমাধানের জন্য বেরীবাঁধ ও ব্লক দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

সলিমাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহীদুল ইসলাম অপু বলেন, প্রায় পাঁচ বছর যাবতই সলিবাদের যমুনার ভাঙন শুরু হয়। এ পর্যন্ত চার শতাধিক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি যমুনায় চলে গেছে। এ বছর প্রায় এক মাস যাবত ভাঙছে। সলিমাবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিলীনের পথে। পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী ও আমাদের এমপি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাৎক্ষনিক উপমন্ত্রী দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। ভাঙনরোধে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে আনুষ্ঠানিক জিও ব্যাগ ফেলা হবে।

নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় রক্ষার্থে জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে আমরা জিও ব্যাগ ফেলছি। স্থায়ী সমাধানের জন্যও পরিকল্পনা আছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ভাঙনরোধে ৩০০ মিটার এলাকায় বৃহস্পতিবার থেকে জিও ব্যাগ ফেলা হবে। বন্যাকালীন সময়ে স্থায়ীভাবে কোন সমাধান করা যাবে না। পার্শ্ববর্তী এলাকায় সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিনে প্রকল্প চলমান আছে। সেই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান করার পরিকল্পনা আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *