ভূঞাপুরে প্রস্তাবিত ইকোনমিক জোনের কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে

ভূঞাপুরে প্রস্তাবিত ইকোনমিক জোনের কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে

ভূঞাপুর

ভূঞাপুর প্রতিনিধি: ভূঞাপুরে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইকোনমিক জোন) স্থাপনের কার্যক্রম অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে বলে জানা গেছে। তিন বছর অতিবাহিত হলেও বর্তমানে প্রস্তাবিত এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। এছাড়া প্রস্তাবিত ওই এলাকাকে উপজেলার মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত করতে যমুনা নদীর উপর বাঁধ তৈরির কাজের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। ফলে ভূঞাপুরের এই চরাঞ্চলবাসীর মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার বিষয়ে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে।

তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির দাবি করেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজের কিছুটা ধীরগতি হলেও বর্তমানে পূর্ণদমে কাজ চলছে।

জানা যায়, উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের পলসিয়া, নলসিয়া, কোনাবাড়ি, দোভায়া, পাটিতা পাড়া এবং গোবিন্দাসী ইউনিয়নের গোবিন্দাসী, কষ্টা পাড়া, ভালকুটিয়া চরাঞ্চলের ৫০২.০২ একর খাস জমিতে প্রস্তাবিত এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের জায়গা ২০১৯ সালের ২৮ জুন, শুক্রবার দুপুরে পরিদর্শন করেন তৎকালীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান, সচিব পবন চৌধুরী।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির, তৎকালীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের মহাব্যবস্থাপক ও যুগ্ম সচিব (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. মনিরুজ্জামান, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মোঃ শহিদুল ইসলাম প্রমুখ। এরপর দীর্ঘ তিন বছর অতিবাহিত হলেও এই প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রমে তেমন কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।

ভূঞাপুরের যমুনা নদীতে জেগে উঠা চরের ৫০২.০২ একর জমির এই প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানের সড়ক, নদী ও রেলপথে সরাসরি যোগাযোগ সুবিধা রয়েছে। দেশে শুধুমাত্র প্রস্তাবিত ভূঞাপুরের এই অর্থনৈতিক অঞ্চলেই এই সুবিধা বিদ্যমান। ফলে এখানে উৎপাদিত পণ্য সারাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কম সময়ে ও কম খরচে পৌঁছানো সম্ভব।

এ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে উপজেলার পিছিয়ে পড়া চরাঞ্চলের লোকসহ জেলার হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে; প্রসার ঘটবে ব্যবসা বাণিজ্যের। এতে যমুনার ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে পূর্বপাড়ের প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকার ফসলিজমি ও বসতভিটা; সুযোগ সৃষ্টি হবে পর্যটন শিল্পেরও।

ভূঞাপুর ইবরাহিম খাঁ সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ ইমন প্রামানিক বলেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব এই এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জোর দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর্মসংস্থানের একটি বড় অংশ যেন এই অঞ্চলের মানুষের জন্য সংরক্ষিত রাখার দাবি জানান এই শিক্ষার্থী।

স্থানীয় নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ সেলিম সিকদার, মোঃ শামসুল হক, মোঃ জুলহাস শেখ, মমতা বেগম, মোছাঃ আমেলা বেগম বলেন, দীর্ঘ তিন বছর চলে গেলেও এই চরাঞ্চলে এখনো ইপিজেড স্থাপনের কোন কার্যক্রম শুরু হয়নি।

এছাড়া তৎকালীন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বেশ কিছু ব্যক্তিগত জমিকে খাস জমি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ফলে বেশ কিছু জমির মালিকের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা চাই জমির প্রকৃত মালিককে ক্ষতিপূরণ দিয়ে এই এলাকায় ইপিজেড স্থাপন করা হোক। এর ফলে এই এলাকার মানুষের ভাগ্য আমূল পরিবর্তন হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই এলাকায় দ্রুত ইপিজেড স্থাপনের জোর দাবি জানাচ্ছি।

উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদার জানান, ভূঞাপুরের অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তার সব খাস জমি নয়; এর মধ্যে কিছু জমি নিয়ে জটিলতা রয়েছে। তারপরও আমরা চাই ভূঞাপুরে দ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হোক। অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে এই এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে।

ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বেলাল হোসেন জানান, উপজেলার নিকরাইল ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চরাঞ্চলে প্রায় ৫০২.০২ একর জমিতে সেনাবাহিনীর একটি দল অর্থনৈতিক অঞ্চলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়া ওই চরের সাথে মূল ভূখণ্ডকে যুক্ত করতে যমুনা নদীতে একটি বাঁধ তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম চালাচ্ছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি টিম।

তিনি আরো জানান, আশাকরি খুব দ্রুতই ভূঞাপুরের প্রস্তাবিত অর্থনীতি অঞ্চলের কার্যক্রম শুরু করা যাবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির জানান, ভূঞাপুরের প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক জোনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে এই কার্যক্রম কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও বর্তমানে এই কার্যক্রম পুরোপুরি চলছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দল বর্তমানে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করছেন। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড যমুনার ওই অংশে বাঁধ তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাই করছে।

তিনি আরো জানান, আশাকরি খুব দ্রুতই ভূঞাপুর তথা টাঙ্গাইলবাসীর স্বপ্নের অর্থনৈতিক অঞ্চল তার কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *