মধুপুরে এবছর আনারস চাষে কৃষকের অর্থনৈতিক সাফল্য

মধুপুরে এবছর আনারস চাষে কৃষকের অর্থনৈতিক সাফল্য

ফিচার মধুপুর

মধুপুর প্রতিনিধি: টাঙ্গাইল জেলার শাল-সেগুনে ঘেরা লাল মাটির সমতল ভূমি মধুপুরে আনারস চাষে কৃষকের অর্থনৈতিক সাফল্য দেখা গেছে। প্রাকৃতিক এই প্রাচীন রসালো গুচ্ছ বিদেশী ফল আনারসের দেশ এবং বিদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। চলতি মৌসুমে আনারস বিক্রি করে ভালো লাভের আশায় বুক বেধেছে মধুপুরের আনারস চাষিরা।

জানা যায়, দেশে সর্বপ্রথম আনারস চাষের গোড়াপত্তন হয় ১৯৪২ সালে। মধুপুরের ইদিলপুর গ্রামের ক্ষুদ্র নৃতাত্তিক গারো সম্প্রদায়ের মিজি দয়াময়ী সাংমা প্রথম আনারস চাষ শুরু করেন। তিনি মেঘালয় থেকে ৭৫০টি চারা এনে তাঁর বাড়িতে আনারস চাষ শুরু করেন। সেই চাষকে সমৃদ্ধ করে বতর্মানে সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আনারস চাষ হয়ে থাকে।

জানা যায়, সারা দেশে ৫০ হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে বিভিন্ন জাতের আনারস চাষ হয়েছে। এর মধ্যো টাঙ্গাইলের মধুপুর, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, ভালুকা, ফুলবাড়িয়া, ঘাটাইল ও জামালপুর সদর উপজেলায় আনারস উৎপাদন হয়। এ অঞ্চলটি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল শালবনের একাংশ। শাল বন এলাকার মাটি আনারস চাষের উপযোগী। এখানের জলবায়ু আনারসের অনুকূল। তাই বৃহত্তর ময়মনসিংহে আনারসের চাষ প্রধানত হয় গড় অঞ্চলেই।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, বতর্মানে মধুপুরে আনারস চাষ সমৃদ্ধ। এবছর উপজেলায় মোট ৬৮৪০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। তার মধ্যের রয়েছে জায়ান্টকিউ জাতের ৪০৮৮ হেক্টর, হানিকুইন বা জলডুগি ২৭৪০ হেক্টর, এমডি-২ সুপার সুইট ১২ হেক্টর।এছাড়াও নতুন করে কৃষকদের মাঝে ২ লক্ষ ৭০ হাজার এমডি -২ সুপার সুইট জাতের আনারসের চারা বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, একটি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় ফসল আনারসের সাথে কচু, আদা, হলুদ, পেঁপে, কলা প্রভৃতি সাথী ফসল বা রিলে ফসল হিসাবে চাষ করা যায়। যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে।

আনারসের জাতের মধ্যে হানিকুইন বা জল ডুপি/জলডুগি, জায়ান্টকিউ, ঘোড়াশাল, ফিলিপাইনের এম ডি-২ জাতের আনারস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অধিক পরিমাণে চাষ হয়ে থাকে। জাত ভেদে আনারসের স্বাদ, গন্ধ এবং মিষ্টতা ভিন্ন হয়ে থাকে। জেলার লাল মাটির গড় এলাকার আনারস একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। প্রতিটি ফলে মুকুটের ন্যায় থাকে বলে এটিকে বলা হয় ফলের রানী।

শোলাকুড়ি ইউনিয়নের, পিরোজপুর, চাপাইদ গ্রামের আনারস চাষী মোঃ মোফাজ্জল হোসেন ও মোঃ তাজুল ইসলাম জানান, তারা পৃথক পৃথকভাবে প্রায় ৬ লক্ষ ও ৭ লক্ষ বিভিন্ন জাতের আনারস চাষ করেছেন। তারা জানান, স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানিতে প্রতি টন আনারস ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করছেন। খুচরা বাজারে প্রতিটি আনারস জাত এবং আকার ভেদে ২০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করেন তারা।

আউশনারা ইউনিয়নের ইদিলপুরে প্রায় ৪০ বছর পূর্বে স্থাপিত আনারস চাষী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি ও ইদিলপুর উচ্চ বিদ্যাজলয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক জানান, তার সমিতির অনেক সদস্য আনারস চাষ ও ব্যাবসা করে লাভবান হয়েছেন। তবে সরকারি পদক্ষেপে আনারস বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে আরও লাভবান হতো।

আনারস চাষি মোঃ মোস্তফা জানান, একটি সুমিষ্ট আনারস লাইফ টাইম পাকা অবস্থায় যেহেতু ৩০ দিন এটির ফলন; প্রথম বছর কম হলেও দ্বিতীয় বছর থেকে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন। তিনি আরও বলেন, মধুপুরে যদি আনারস সংরক্ষণের জন্য কোল্ডস্টোরেজ, আনারস নির্ভর শিল্প কারখানা স্থাপন করতে পারা যায়, তবে আনারস একটি প্রকৃত অর্থকরী শস্য হিসাবে পরিগণিত হবে।

স্থানীয় চাষিরা জানান, আনারস একটি লাভজনক ফসল বতর্মানে এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হরমোন প্রয়োগ করে সারাবছর চাষাবাদ করা যায়। অসময়ে আনারস চাষ করলে দামও ভালো পাওয়া যায়। সিজনাল আনারসের পাশাপাশি ১২ মাসই আনারস চাষের প্রযুক্তি পেয়ে অতিরিক্ত মুনাফা এবং বর্ষা আসার পূর্বেই বিপণন করতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় আনারস চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আল মামুন রাসেল বলেন, এ বছর ৬ হাজার ৫শ’ ৪২ হেক্টর জমিতে আনারস চাষে চাষীদের সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এবার আনারসের ফলনও ভালো হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ার আশা করছে কৃষকরা। আনারসের গুণগত মান ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারা এসে এখান থেকে কিনে নিয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *