ধনবাড়ী প্রতিনিধি: কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্র শ্রী বড়ুয়া বলেছেন, শুধু ধানের ফলন বৃদ্ধিই নয়, পুষ্টিসমৃদ্ধ ধান উৎপাদনের দিকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এমনকি উদ্বৃত্ত হলেও আমাদের বিপুল জনগোষ্টির এখনো পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় উচ্চফলনশীল জাতের পাশাপাশি পুষ্টিসমৃদ্ধ ধান উৎপাদনে দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে।
বুধবার ১৭ মে বিকেলে কৃষিমন্ত্রীর স্মৃতিবিজড়িত এলাকা ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্ধি-কামারপাড়া গ্রামে ব্রি ধান-৯২ ও ব্রি ধান-১০২ এক ফসল কর্তন ও কৃষক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, কৃষকের বোরোর ফলনের ধারনা বদলে দিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত নতুন ধানের জাতগুলো। এবার এলাকাভেদে নতুন জাত ব্রি ধান-৮৯, ৯২, বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ এবং ব্রি ধান-১০২ জাতগুলোর বিঘাপ্রতি গড় ফলন হয়েছে ৩০-৩৩ মণ। এসব জাতের নতুন ধান চাষ করে কৃষকরা অভূতপূর্ব ফলন পেয়েছেন। ৩৩ শতকে ফলন পেয়েছেন ৩৩ মন অর্থাৎ শতকে এক মণ ফলন হয়েছে। কোথাও কোথাও তার বেশি ফলনের রেকর্ড রয়েছে। যেখানে ব্রি উদ্ভাবিত পুরনো জাতগুলোর ফলন ছিল বিঘাপ্রতি ২২-২৫মণ মাত্র। তিনি কৃষদের কে পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং উচ্চফলনশীল জাত আবাদ সম্প্রসারণের পরামর্শ প্রদান করেন।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাইস ফার্মিং সিস্টেম বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এই ফসল কর্তন ও কৃষক সমাবেশে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মনিটরিং কৃষিবিদ আশরাফ উদ্দিন ও ঢাকা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক এসএম সোহরাব উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্রি বিজ্ঞানী সমিতির সভাপতি ড. আমিনা খাতুন। অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ব্রির রাইস ফার্মিং সিস্টেমস বিভাগের প্রধান ড. মোঃ ইব্রাহীম ও টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার, কৃষক প্রতিনিধি সোহরাব উদ্দিন ও আনসার আলী।
সমাবেশে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীর বলেন, প্রতি বছর আমাদের জনসংখ্যার সাথে ২০-২২লক্ষ লোক যোগ হচ্ছে। ১৭ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে খাবারের নিশ্চয়তা দিতে হলে অবশ্যই ব্রি উদ্ভাবিত নতুন জাতের উচ্চফলনশীল ধানগুলো চাষ করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। কেননা ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত নতুন জাতগুলো ফলন আগের পুরনো জাত ব্রি ধান-২৮ ও ২৯ এর তুলনায় অনেক বেশি। এগুলো যদি ভালো পরিচর্যা করা যায় তাহলে আরো বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব। সুতরাং এখন পুরনো জাতগুলো বাদ দিয়ে নতুন জাতের ধান ব্রি ধান-৮৯, ব্রি ধান-৯২, বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ এবং ব্রি ধান-১০২ চাষ করতে হবে। উপরুন্তু বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ এবং ব্রি ধান-১০২ চিকন, উচ্চ জিংকসমৃদ্ধ, জিরা টাইপের যা আমাদের পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করবে। এগুলো প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধান বিধায় ধানের বাজারমূল্য অন্য ধানের তুলনায় বেশি।
সরিষা অর্ন্তভূক্তির মাধ্যমে দুই ফসলি শস্য বিন্যাসকে তিন ফসলি শস্য বিন্যাসে রুপান্তর প্রদর্শণীর প্রধান গবেষক ড. আমিনা খাতুন জানান, নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৯২ জাতের ধানের আবাদে ধান পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৯ মেট্রিক টন। নতুন উদ্ভাবিত এই দুটি জাতের ধানের আবাদে হেক্টর প্রতি ধান বেশি পাওয়া যাচ্ছে ২ মেট্রিক টন করে আর ব্রি ধান-১০২ এর গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৮.৬টন। তাছাড়া এ ধানে জিংকের পরিমাণ প্রতি কেজিতে ২৫ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম। সুতরাং এই দুটি জাত আবাদ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষক প্রতিনিধি সোহরাব উদ্দিন জানান, তিনি এবার আগে যে জমিতে দুই ফসল করতেন ব্রির বিজ্ঞানীদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় এখন আমনের পর সরিষা তারপর বোরো আবাদ করছেন। এভাবে দু’ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রুপান্তর করায় তার লাভের পরিমাণ দেড় থেকে দু’গুন বেড়ে গেছে। তিনি আগামীতে এই আবাদ আরো সম্প্রসারণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
স্থানীয় কৃষক আনসার আলী বলেন, এবার মুশুদ্ধিতে ব্রির নতুন জাতের ধান ব্রি ধান-৯২ চাষ করে তিনি ৩০ শতকের বিঘায় ফলন পেয়েছেন ৩৪মন এবং ব্রি ধান১০২ এর ফলন পেয়েছেন ৩২মণ। বাড়তি হিসেবে আমনের পরে বারি সরিষা-১৪ আবাদ করে বিঘায় প্রায় ৬মণ করে সরিষা পেয়েছেন যার বাজার মূল্য ২৪০০০টাকা। কৃষিকে আমরা আগে অলাভজনক ভাবতাম কিন্তু এখন কৃষি অনেক বেশি লাভজনক পেশা।
অনুষ্ঠানের আগে কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে ফসল কর্তনে অংশ নেন প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিবৃন্দ। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন ব্রির সিনিয়র বিজ্ঞানী ড. খায়রুল কায়েস, এবিএম জামিউল ইসলাম, মো. আব্দুল মোমিন বীর জাহাঙ্গীর সিরাজী ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান প্রমুখ।