কালিহাতীর জোকার চরে সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে চলছে!

কালিহাতীর জোকার চরে সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে চলছে!

কালিহাতী ফিচার

কালিহাতী প্রতিনিধি: কালিহাতী উপজেলার জোকার চরে শেখ হাসিনা সড়কের উত্তরাংশে নিউ ধলেশ্বরী নদীর উপর অবশেষে সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে চলছে। দীর্ঘসময় স্থগিত থাকার পর সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলায় স্থানীয়দের মুখে হাসি ফুটেছে।

জানা গেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পশ্চিমে চরাঞ্চলের মাহমুদ নগরের গোল চত্ত্বর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তে মহাসড়ক পর্যন্ত সড়কটি শেখ হাসিনা সড়ক নামে পরিচিত। ওই সড়কের উত্তরাংশে নিউ ধলেশ্বরী নদীর উপর সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কালিহাতী উপজেলার জোকারচর নামক স্থানে ২৬৪ মিটার দীর্ঘ পিএসসি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দরপত্র আহ্বান করে। পরবর্তীতে হায়দার কন্সট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড, অবনী এন্টারপ্রাইজ ও সৈয়দ মজিবুর রহমান নামক তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জয়েন্টভেঞ্চারে ৩৪ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৯ টাকা চুক্তিমূল্যে সেতু নির্মাণের কাজ পায়। তারা ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ পেয়েও অজ্ঞাত কারণে সেতু নির্মাণে গড়িমসি করতে থাকে। পরে ২০২২ সালে জোকারচরে সামান্য কিছু মালামাল এনে সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি স্থানীয় সংসদ সদস্য হাছান ইমান খান সোহেল হাজারী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার পরপরই তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ায় সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অথচ চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা। এরপর বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাজারে সেতু নির্মাণের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পটি মুখ থুবরে পড়ে।

সেতুটি যথাসময়ে নির্মাণের লক্ষে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের একাধিকবার তাগিদ দেওয়া হলেও কোন সুফল আসেনি। পরে এলজিইডি টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রফিকুল ইসলাম ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে সেতু নির্মাণে রাজি করান। কিন্তু সেতুর দক্ষিণপাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি অধিগ্রহন করা হলেও মালিক পক্ষ টাকা বুঝে না পাওয়ায় জমি ছেড়ে না দেওয়ায় ওই অংশের কাজ বিলম্বিত হচ্ছিল।

জোকারচর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সেতুটি নির্মিত হলে টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলের মানুষ সহজেই শেখ হাসিনা সড়ক দিয়ে উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার সুযোগ পাবে। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের বিকল্প পথ তৈরি হবে। এতে প্রতি ঈদে মহাসড়কে যানজটও হবে না। তারা সেতুটির নির্মাণ তাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানান।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অবনী এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ হেকমত আলী জানান, নিউ ধলেশ্বরী ও তার দক্ষিণ পাশে সেতুর আরও ১২টি পাইল বাকি রয়েছে। ওই জমি সরকার অধিগ্রহন করলেও মালিক টাকা বুঝে পায়নি। তাই তিনি জমি ছেড়ে দিচ্ছেন না। তবে তাকে নিয়ে বারবার বৈঠক করা হচ্ছে। তিনি জমি ছেড়ে দিলে নদী ব্যতিত সকল কাজ শেষ করে রাখা যাবে।

ওই সেতুর নির্মাণ কাজ দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কালিহাতী এলজিইডি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মিন্টু মিয়া জানান, নানা কারণে সেতু নির্মাণে একটু বিলম্ব হচ্ছে। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পুনরায় কাজ শুরু করার পর খুব দ্রুত এগুচ্ছে। এ পর্যন্ত সেতুর ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কাজের ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে আগামি অর্থ-বছরে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

টাঙ্গাইল এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সেতুটি নিয়ে তারা খুব টেনশনে ছিলেন। একদিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিত কারণে মালামালের দাম বেশি; অন্যদিকে অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব তাদের চিন্তিত করে ফেলেছিল। সকল পক্ষের সঙ্গে বারবার বৈঠক করার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেছে এবং খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আগামি ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *