ভূঞাপুর প্রতিনিধি: বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু’ প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের দুই প্রান্তে যমুনা নদীর ওপর নির্মাণাধীন প্রকল্পের প্রায় ৬১ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এর কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় চার দশমিক ৮০ কিলোমিটার এই রেল সেতুর দুপাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ ও সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। এ মেগা প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। যার মধ্যে ছয় হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
জাপানি আইএইচআই, এসএমসিসি, ওবায়শি করপোরেশন, জেএফই ও টিওএ করপোরেশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বাস্তবায়ন করছে।
২০২০ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেল সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। আগামী বছরের আগস্টের মধ্যে এ প্রকল্পের শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই রেল সেতু চালু হলে ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের ২২ জেলার ট্রেন চলাচল সহজ হবে। একই সঙ্গে আন্তঃএশিয়া রেল যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ করিডোর হিসাবে কাজ করবে। রেল সেতুটি উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতুর কাজ চলছে। শত শত শ্রমিক বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব পালন করছেন। কেউ পাইলিংয়ের কাজ করছেন, কেউ স্প্যানের কাজ করছেন, কেউ করছেন ঢালাইয়ের কাজ। রেল সেতুর ৫০টি পিলারের মধ্যে ৩১টি এবং ৪৯টি স্প্যানের মধ্যে ১৫টির কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ১৬তম স্প্যানের সুপারস্ট্রাকচারের কাজ চলছে। বাকি ১৯টি পিলারের বিভিন্ন স্তরের ঢালাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে।
সুপারভাইজার নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা বর্তমানে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করছি। সাব কন্ট্রাক্টের কাজ করলেও এখানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি। যেভাবে কাজ হচ্ছে তাতে আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হবে। ফলে আগামী বছরই সেতুটি উদ্বোধন করা যাবে।
ওভার ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের সাইড ইঞ্জিনিয়ার মো. রাকিবুল হাসান প্রান্ত বলেন, আমাদের কাজ দেখে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট। এখনও পর্যন্ত আমাদের কোনো শ্রমিক বা কর্মকর্তার মেজর কোনো ইঞ্জুরি নেই। আশা করি নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হবে।
স্থানীয় শাজাহান কবির ও মো. শফিকুল বলেন, এখানে আমাদের জমি ছিল। সেই জমিতে যে ফসল হতো তাতে সংসার চলত না। আমরা এক সময় খুব কষ্টে দিনযাপন করেছি। আজ এই যমুনার পাড়ে বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ায় সেতুর পাড়ে দোকান করছি। এছাড়াও ইট-বালির ব্যবসা আছে। এখানে বর্তমানে কেউ বেকার নেই। বঙ্গবন্ধু রেল সেতু হওয়াতে আমরা খুশি।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার নলসন্ধ্যা গ্রামের রেজাউল করিম বলেন, আমি গাজীপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। ছুটিতে বাড়ি আসার সময় চন্দ্রা ও টাঙ্গাইলে যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয়। রেলসেতুটি চালু হলে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টায় উল্লাপাড়া আসতে পারব। এতে আমাদের যাত্রাও নিরাপদ হবে।
প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করছে। ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেল সেতুর কাজ শেষ হলে এর ওপর দিয়ে ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে। ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলবে। তিনি আরো বলেন, রেল সেতুর কাজ দ্রুত গতি চলছে। সেতুটি নির্মাণের জন্য প্রায় এক হাজার দেশি-বিদেশি শ্রমিক দিনরাত কাজ করেছেন। ইতোমধ্যে রেল সেতুর ৬১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশাকরি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
টাঙ্গাইল-২ (ভুয়াপুর-গোপালপুর) আসনের সংসদ-সদস্য তানবীর হাসান ছোট মনির বলেন, টাঙ্গাইলবাসীর একটা স্বপ্নের প্রজেক্ট ইকোনমিক জোন। এই রেল সেতুর উত্তর-পূর্ব পাশে ইকোনমিক জোনের কাজ চলছে। এখানে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের জায়গা হবে। এই রেলসেতু নির্মাণ হলে যে কোনো জায়গা থেকে পণ্য পরিবহণ সহজ হবে।