প্রকৃতির সর্বত্রই কৃষ্ণচূড়ার রঙে লেগেছে আগুন!

প্রকৃতির সর্বত্রই কৃষ্ণচূড়ার রঙে লেগেছে আগুন!

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর পরিবেশ ফিচার

সময়তরঙ্গ ডেক্স: ঋতুরাজ বসন্ত মানেই ফুল ফোটার ঋতু। ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমি মানুষের কাছে এ বাস্তবতায় কৃষ্ণচূড়ার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য গ্রীষ্মকে দিয়েছে এক অনন্য মাত্রা। ঋতুরাজ বসন্তকে হার মানায়ে কৃষ্ণচূড়া সময়ের আবর্তনে মোহনীয় সৌরভে আবারো হাজির হয়েছে আমাদের চারপাশে।

গ্রীষ্মের এই সময়ে কৃষ্ণচূড়ার বর্ণিল রূপে সেজে উঠেছে প্রকৃতি। দেখলেই মনে হয় কৃষ্ণচূড়ার রঙের আগুন জ্বলছে প্রকৃতিতে। এককথায় প্রকৃতিতে যেন আগুন লেগেছে কৃষ্ণচূড়ার। সারাদেশের মতো টাঙ্গাইল জেলার প্রকৃতিতেও এখন কৃষ্ণচূড়ার সুদিন বইছে। এ সুদিনের সুবাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমি মানুষের হৃদয়। পাখির ডানায়, হাওয়ায়-হাওয়ায় উড়ছে তার লাবণ্য। গাছে গাছে রক্তিম আভা নিয়ে জেগে থাকা কৃষ্ণচূড়া দৃষ্টি কাড়ছে সেইসব ফুলপ্রেমি মানুষদের, যারা শত ব্যস্ততার মধ্যেও ফুলের জন্য অপেক্ষা করেন। আর কৃষ্ণচূড়ার জন্য প্রহর গুনেন।

জেলা শহরের কয়েকজন ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমি মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যারা ফুলপ্রেমি মানুষ, তাদের কাছে কৃষ্ণচূড়া একটি জনপ্রিয় ফুল। নানা বৈশিষ্ট্যে দৃষ্টিনন্দন এ ফুলের কদর রয়েছে সব মহলেই। বিশেষ করে বাংলা কাব্য, সাহিত্য, সংগীত ও বিভিন্ন উপমায় কৃষ্ণচূড়া ফুলের কথা ব্যাপকভাবে উঠে এসেছে। ফুলটির রং এতো তীব্র যে অনেক দূর থেকেই চোখে পড়ে। হঠাৎ দূর থেকে দেখলে মনে হবে, কৃষ্ণচুড়া গাছে যেন রঙের আগুন লেগেছে।

স্বাধীনতার রূপক ও চেতনার অর্থে ফুলটিকে ব্যবহার করেছেন অনেক কবি, সাহিত্যিক। শুধু কবি নয়, টাঙ্গাইল শহর ও গ্রামের পথচারী থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার ফুলপ্রেমিদের আনন্দ ও মন কেড়েছে গ্রীষ্মের রাজা কৃষ্ণচূড়া। এছাড়া জেলার প্রতিটি উপজেলার ইট-পাথরের মাঝে এবং গ্রামেগঞ্জে গেলেও গ্রীষ্মের চোখ জুড়ানো কৃষ্ণচূড়া ফুল বাঙালির মনকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।

সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এ দুই মাসে আর গ্রীষ্মের ফুলের কথা বলতেই সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে কৃষ্ণচূড়ার কথা। সুমিষ্ট রসাল ফলের জন্য গ্রীষ্মকাল এগিয়ে রয়েছে, তবে ফুলের দিক থেকেও অন্যসব ঋতুর তুলনায় এগিয়ে রয়েছে গ্রীষ্মকাল। তাই ফুল উৎসবের ঋতু বলা যায় গ্রীষ্মকালকেই। এ মৌসুমে কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙের যে উম্মাদনা, তা এতোই আবেদনময়ী যে চোখ ফেরানো অসম্ভব। কৃষ্ণচূড়ার ঐশ্বর্য, তার রঙের উজ্জ্বলতা অন্য ফুলকেও যেন হার মানিয়েছে। কৃষ্ণচূড়া যে কাউকে দিয়ে যাচ্ছে অন্যরকম এক ভালোলাগা।

কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিখ রেজিয়া। এটি ফাবাসিয়ি পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ যা গুলমোহর নামেও পরিচিতি রয়েছে। বসন্তের শেষ দিকে সাধারণত কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে পড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে পত্রহীন বাকানো ডালগুলোতে দেখা যায় কলির আভাস। অন্যান্য ফুল গাছে যখন নতুন পাতা আসে, কিন্তু ফুল আসে না। ঠিক তখনই কৃষ্ণচূড়ার সব পাতা ঝরে গিয়ে ফুলের কলি দেখা দেয়। আর গ্রীষ্মের শুরুতেই দেখা যায় লালের আভাস। তারপর লালে লালে উজ্জ্বল হয়ে প্রতৃতিতে যেন আগুন লাগিয়ে দেয় কৃষ্ণচুড়া।

ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রীষ্মের শুরু থেকেই কৃষ্ণচূড়া ফুলটি প্রকৃতিতে নেমে আসতে শুরু করে। দূর থেকে কৃষ্ণচূড়া দেখলে শুধু মানুষের নয়, পাখিদেরও যেন মন ভরে ওঠে। তাই নানা জাতের পাখির আনাগোনাও থাকে গাছটিকে ঘিরে। বিশেষ করে জাতীয় পাখি দোয়েল, টুনটুনি, চড়ুই, বুলবুল পাখির সরব উপস্থিতি থাকে সারা বেলা। শরীরে রক্তিম আভা মেখে কৃষ্ণচূড়া যেন সারাক্ষণ সবুজ বনভূমি, তৃণভূমিকে আলোকিত করে রেখেছে।

জেলা শহরের বাসিন্দা একজন ফুলপ্রেমি জানান, যখন কৃষ্ণচূড়া ফৌটে তখন গাছ-গাছালি লাল-সবুজ রঙে যেন মুখর হয়ে উঠে। আর এ সময়টা আমার কাছে ভালো লাগে অন্যরকমভাবে। এ ভালো লাগার কথা মুখে বলে প্রকাশ করা যাবে না। প্রতিবছর নয়, প্রতিটি দিনই যেন অপেক্ষায় গ্রীষ্মের এই দিনগুলোর জন্য। কৃষ্ণচূড়ার রঙে প্রকৃতি যেন এক অপূর্ব সুন্দরে সাজে। প্রতিদিন এ দৃশ্য না দেখলে মনে হয় জীবনটাই বৃথা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *