এলেঙ্গার মাজেদুর রহমান: কয়েক বছরে জিরো থেকে হিরো: অবৈধ বালু ব্যবসায়ী!

এলেঙ্গার মাজেদুর রহমান: কয়েক বছরে জিরো থেকে হিরো: অবৈধ বালু ব্যবসায়ী!

কালিহাতী টাঙ্গাইল ফিচার

কালিহাতী প্রতিনিধি: কালিহাতী উপজেলার উপ-শহর এলেঙ্গা পৌরসভার অবৈধ বালু ব্যবসায়ী মাজেদুর রহমান কয়েক বছরে জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন। গড়ে তুলেছেন কোটি টাকার সাম্রাজ্য। এলেঙ্গার কলেজ রোডে গড়ে তুলেছেন কোটি টাকার বাড়ি।

অবৈধ বালু ব্যবসা করে মাত্র কয়েক বছরে শূন্য থেকে কোটি টাকার বিলাস বহুল বাড়ি ও বেশ কয়েকটি ট্রাকের মালিক বনে গেছেন তিনি। ওই অবৈধ সাম্রাজ্য রক্ষায় তৈরি করেছেন ক্যাডার বাহিনী। কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুললেই নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যে চলছে তার অবৈধ কার্যক্রমের মহাযজ্ঞ।

স্থানীয়রা জানায়, কয়েক বছর আগেও মাজেদুর ভাগ্য পরিবর্তন করতে প্রবাসে পাড়ি জমান। প্রবাসে সুবিধা করতে না পেরে দেশে ফিরে আসেন। দেশে আসার পরপরই জড়িয়ে পড়েন অবৈধ বালু ব্যবসায়। তারপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গত কয়েক বছরে মাজেদুর কোটি-কোটি নগদ টাকা ও সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার বাঁশি গ্রামের চিহ্নিত বালু ব্যবসায়ী মাজেদুরের বাবা মৃত তালেব আলী এলেঙ্গা গার্লস হাই স্কুলের দপ্তরির চাকুরি করতেন। সংসারে অভাব অনটনের মধ্যে বড় হয় মাজেদুর। টাকার অভাবে স্কুলের গন্ডিও পেরোতে পারেনি। টাকার অভাবে পড়াশুনা করতে না পেরে তিনি ধার-দেনা করে বিদেশে পাড়ি জমান। সেখানে সুবিধা না করতে পেরে দেনার টাকা মাথায় নিয়েই দেশে ফিরে আসেন।

দেশে এসে এলেঙ্গা ও আশপাশের নদীতে বর্ষায় বাংলা ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেন। পরে শুস্ক মৌসুমে নিউ ধলেশ্বরী নদীর তীর কেটে বালু বিক্রি শুরু করেন। অবৈধ বালু ব্যবসার প্রসার ঘটাতে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। তারপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বালু ব্যবসা করে এলেঙ্গা পৌরসভার কলেজ রোডে ৮ শতাংশ ভূমির উপর বিলাসবহুল বহুতল বাসভবন তৈরি করেন। এছাড়া নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।

জানা মতে, এলেঙ্গা পৌরসভায় মাজেদুরের ৩টি অবৈধ বালুঘাট রয়েছে। দিনরাত নদী ও নদীর তীর কেটে বালু বিক্রি করছেন। ফলে এলেঙ্গা নদীর উপর নির্মিত ব্রিজটি ধ্বসে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। নদীর তীর কেটে ফেলায় একদিকে হুমকিতে রয়েছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে সরকারি রাস্তা, দুষণ হচ্ছে পরিবেশ। অবৈধভাবে বালু বিক্রি করায় সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে জানান, মাজেদুর মাসোহারা দিয়ে স্থানীয় নেতৃত্ব ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব অবৈধ বালুঘাটের নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এছাড়া কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়ি চালকের সাথে তার সংখ্যতা রয়েছে। তারা জানান, স্থানীয়রা প্রশাসনকে অবৈধ বাংলা ড্রেজার ও বালু উত্তোলনের খবর জানালেও লোক দেখানো অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সামান্য অর্থদন্ড দেওয়া হয়, যা বালু ব্যবসায়ীর জন্য সহনীয়। অভিযানের পরই পুনরায় অবৈধ বালু উত্তোলন ও বিক্রি চলতে থাকে।

নদীতে বাংলা ড্রেজারে বালু উত্তোলন ও বিক্রির কারণে সরকারি রাস্তা বিনষ্ট হওয়ায় প্রতিবাদ করায় মারপিটসহ হত্যার হুমকি দেয় ওই বালু ব্যবসায়ী। গত ৩০ এপ্রিল (রবিবার) প্রতিবাদ করায় মাজেদুরের বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের লোকজনরা স্থানীয় আজিজ কাউন্সিলরের ছেলে মো. জয় (২২) ও ভাতিজা রাকিব হোসেনকে (২১) পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আহতদের প্রথমে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাদের অবস্থার অবনতি হলে একজনকে ঢাকায় স্থানান্তর (রেফার্ড) করা হয়।

অভিযোগ প্রসঙ্গে, অবৈধ বালু ব্যবসায়ী মাজেদুর রহমান জানান, বালুঘাটের মারামারির বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। তার অর্জিত অবৈধ সম্পদের বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুল হুসেইন জানান, এলেঙ্গা পৌরসভায় অবৈধ বালুঘাটের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত সাপ্তাহে একটি মারপিটের ঘটনা তিনি শুনেছেন। দ্রুত ওইসব অবৈধ বালুঘাটে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *