সখীপুর প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ খান নয়া মুন্সীর জানাজা শেষে তাঁকে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আলমের নেতৃত্বে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। নারীর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়াকে মুক্তিযোদ্ধার প্রতি ‘অসম্মান’ উল্লেখ করে ইউএনওর প্রত্যাহার চেয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম।
বার্ধক্যের কারণে শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে মারা যান ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর গেরিলা আবদুল হামিদ খান। শনিবার দুপুর ২টার দিকে সখীপুর পিএম পাইলট মডেল সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে তাঁর জানাজা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সহস্রাধিক মানুষ জানাজায় অংশ নেন।
পরে সাংবাদিকদের কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘ইসলামী শরিয়তে কোনো নারীর গার্ড অব অনার দেওয়ার সুযোগ নেই, পুরুষের সঙ্গে। জানাজায় শরিক হওয়া শরিয়ত মোটেই সমর্থন করে না।’
তিনি বলেন, ‘ইউএনও বলেছেন, এটা জানাজা না, গার্ড অব অনার। কিন্তু মেয়ে যত বড়ই হোক, তাঁর জানাজায় শরিক হওয়ার সুযোগ নেই। একজন মুর্দার সঙ্গে বেয়াদবি আমি মুসলমান হিসেবে মেনে নিতে পারি না। দেশটা নিয়ন্ত্রণে চললে এমন বেয়াদব তৈরি হতো না।’
সরকারের উদ্দেশে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মান করার কারণে এই ইউএনওকে সখীপুর থেকে রোববারের মধ্যে সরিয়ে নিতে সরকারকে অনুরোধ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘নয়া মুন্সী শুক্রবার রাত ১২টায় মারা গেলেও পরদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মর্যাদার জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়নি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এখানকার অনেক কর্মকর্তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিতাম।’
জানাজা নামাজ শেষে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর মুক্তিযোদ্ধা নয়া মুন্সির জন্য প্রস্তুত করা কবরের পাশে যান। কাদের সিদ্দিকী মরদেহ থেকে দূরে গেলে ইউএনও ফারজানা আলমের নেতৃত্বে ওই মুক্তিযোদ্ধার মরদেহের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান (গার্ড অব অনার) প্রদর্শন করা হয়।
এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আলম বলেন, জানাজা নামাজ এবং গার্ড অব অনার ভিন্ন বিষয়। উনি হয়তো ধর্মীয় অনুভূতি থেকে বলতে চেয়েছিলেন গার্ড অব অনার মহিলারা দিতে পারবে না। আমার ধারণা উনি জানাজা নামাজের সঙ্গে গার্ড অব অনার মিলিয়ে ফেলেছেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়ের নির্দেশনা ছিল গার্ড অব অনার দিতে না দিলে আমরা যেন চলে যাই। কিন্তু পরে উপস্থিত স্থানীয়দের অনুরোধে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার দিয়েই আমরা চলে এসেছি।
তিনি আরো বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নারী ইউএনও গার্ড অব অনার দিতে পারবেন না, এমন কোনো আইনি বাধা নেই।’
জানাজা নামাজে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার খোকা (বীর প্রতীক), পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হানিফ আজাদ, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ছোট ভাই আজাদ সিদ্দিকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত শিকদার, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার জনাব এমও গণি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম সরকার লাল, সাবেক পৌরসভার মেয়র সানোয়ার হোসেন সজীবসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতাকর্মী, বণিক সমিতির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।