নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলসহ সারাদেশে অব্যাহত প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিং। দিনে রাতে সমানভাবে চলা লোডশেডিং-এ জনজীবন বিপর্যস্ত। এতে একদিকে ফসলের মাঠে সেচ দিতে সমস্যা হচ্ছে। অন্যদিকে প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুৎ না পেয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন স্থানীয় লোকজন। এছাড়া গরমের প্রভাবে টাঙ্গাইলের সর্বত্র হাসপাতালে বাড়তে শুরু করেছে শিশু ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জেলার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলে এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন তাপমাত্রা বাড়ছে।
গত শনিবার (১৫ এপ্রিল) তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রোববার (১৬ এপ্রিল) ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। তবে মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে তাপমাত্রা কিছুটা কমে ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে। জেলা সদরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় খবর নিয়ে জানা গেছে, গরমের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। জেলা শহরের তুলনায় গ্রামে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও বেশি।
অনেক এলাকায় ৩০ মিনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে একদিকে যেমন বাড়িতে মানুষ গরমে পুড়ছে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে জমিতে সেচকাজ। আবার ঈদ উপলক্ষে মার্কেটে বেচাকেনায় চরম বিড়ম্বনা তৈরি হচ্ছে। অনেকে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সকাল থেকে জেলা শহর ও আশপাশের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফসলের মাঠ থেকে বাজার- সব জায়গাতেই লোকসমাগম কম। প্রয়োজন ছাড়া যেন কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না।
তবে ঈদ সামনে রেখে শহরের মার্কেটে রয়েছে মানুষের ভিড়। তবে অধিকাংশ মার্কেটে ঢুকলেই জেনারেটরের আওয়াজ কানে আসছে। বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করেই চলছে কেনাকাটা। জেলা শহরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে অতিরিক্ত লোডশেডিং থাকায় মানুষ মার্কেটে কম আসছেন। যাঁরা আসছেন, তাঁরাও অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছেন। এতে বিক্রিও অনেক কমে গেছে।
শহরের মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলেন, একে তো গরম, অন্যদিকে বিদ্যুৎ থাকছে না। পরিবেশের সঙ্গে মানুষেরও মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে দোকানিদের সঙ্গে ক্রেতাদের বিতর্ক হচ্ছে। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছেন না। এতে বেচাকেনায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
এদিকে লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে বোরোর চাষে। কয়েক দিন ধরে চরম লোডশেডিং থাকায় ঠিকমতো সেচ দিতে পারছেন না। একদিকে তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে সেচ না দিতে পারায় পানি শূন্য হয়ে ধানের জমি ফেটে যাচ্ছে। কৃষকরা বলেন, জীবনে এমন লোডশেডিং দেখিনি। আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ পেলে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পাচ্ছি না। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সখীপুর উপজেলার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, তীব্র গরমে ধানের ব্লাস্ট রোগ (ছত্রাক থেকে হওয়া) রোধে প্রচুর সেচ দিতে হয়। কিন্তু ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং কম ভোল্টেজের কারণে আমরা প্রয়োজনীয় পানি সেচ দিতে পারছি না। টাঙ্গাইলের পিডিবি ও পিবিএস কর্মকর্তাদের মতে, জেলায় দৈনিক ২৮০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে প্রায় ১৪০-১৮০ মেগাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে। এবার তাপপ্রবাহ ৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও অনেক বেড়েছে। এ কারণে রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরও মাঝেমাঝে লোডশেডিং হচ্ছে।