সময় তরঙ্গ ডেস্ক: ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর ড্রাউনিং প্রিভেনশন (এনএডিপি) আসন্ন পবিত্র ঈদ উল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটির সময়ে শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে ১৫ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আহ্বায়ক সদরুল হাসান মজুমদার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও ইনজ্যুরি সমীক্ষা, ২০১৬ অনুসারে দেশে প্রতিদিন গড়ে ৫ বছরের কম বয়সী ৩০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। আর ১৮ বছরের কম বয়সীদের হিসেবে ধরলে প্রায় ৪০ জন শিশুর মৃত্যু হয়।
পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর এই ঘটনা ঘটে থাকে বাড়ির নিকটতম জলাধার যেমন পুকুর (৬৬%), উন্মুক্ত জলাধার (১৬%) যা ঘর থেকে গড়ে প্রায় ৪০ কদম দূরে।
এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর প্রায় ৬০ শতাংশ ঘটে থাকে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে সে সময় পরিবারের সদস্যরা বিশেষ করে মায়েরা প্রাত্যহিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। অর্থাৎ এই সময়টাতে শিশুদের বিশেষ করে অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুদের দেখভাল করার সার্বক্ষণিক কেউ থাকে না। উল্লেখ্য, আমাদের দেশে সামগ্রিক ভাবে বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদে শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক পরিচর্যার কোন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি।
তিনি বলেন, মুসলমান সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদ উল ফিতর ও মে দিবস উপলক্ষে শহরের কর্মজীবী মানুষেরা ছুটি কাটানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। আগত এই ঈদের ছুটি কাটাতে শহরের অধিকাংশ মানুষ নাড়ীর টানে গ্রামে যাবেন।
শহুরে জীবনে অভ্যস্ত অনেক শিশুই সাঁতার জানে না অথচ ছুটির সময়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়ানোর একটা অন্যতম আকর্ষণ হলো উন্মুক্ত জলাধারে (পুকুরে বা খালে-নালায়) গোসল করা। এই সময়ে প্রয়োজন শিশুদের অধিকতর পরিচর্যা করা এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরে রাখা।
তিনি আরো বলেন, ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও আয় বৃদ্ধির ফলে ব্যাপক মানুষের জীবনধারা পাল্টে যাচ্ছে এবং লক্ষণীয় যে বর্তমানে অধিকতর মানুষ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র বিশেষ করে কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যায়।
বিগত বছরগুলোতে এ সময়ে গণমাধ্যম মারফত পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংবাদে আমরা শোকার্ত হয়েছি; আমরা চাই না এ বছর ঈদ ভ্রমণে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটুক। আমরা সকল ভ্রমণ পিপাসু মানুষ ও সাধারণ জনগণ যারা আসন্ন ঈদের ছুটি কাটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদেরকে নিজ নিজ সন্তানদের পানিতে ডুবা প্রতিরোধে বিশেষ সতর্কতা ও নজরদারি বৃদ্ধির আহ্বান জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে প্রতি বছর সারা দেশের প্রায় ৮৭.৮ লক্ষ মানুষ নৌ পথে যাতায়াত করেন। আমরা বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছে উৎসবমুখর মানুষদের নৌ পথে ভ্রমণ আরো নিরাপদ ও আনন্দময় করার আহ্বান জানাচ্ছি। ঝড়বৃষ্টি বিশেষ করে কালবৈশাখি ঝড়ের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে লঞ্চ পরিচালনা নির্বিঘ্নে করতে লঞ্চ মালিক পক্ষকে এবং যাত্রী সাধারণকে আবহাওয়ার বিষয়ে জেনে নৌ পথে চলাচল করতে অনুরোধ করছি।
তিনি বলেন, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই উৎসবমুখর পরিবেশে জীবন বাঁচিয়ে রেখে সুস্থ থাকার যে তাগিদ তা উপলব্ধিকল্পে সাধারণ মানুষের বোধগম্য ও অতি প্রয়োজনীয় বার্তা প্রেরণের মাধ্যমে সকলকে সচেতন করবেন বলে আমরা দৃঢ় প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি। আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা সকলকে পানিতে ডুবা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জোর সুপারিশ করছি।