কালিহাতীর পৌলি নদীতে অবৈধভাবে ভেকু দিয়ে মাটি বিক্রির অভিযোগ!

কালিহাতী

কালিহাতী প্রতিনিধি: কালিহাতী উপজেলার পৌলি নদী থেকে চলতি শুকনা মৌসুম শুরু হওয়ার পর অবৈধভাবে একাধিক ভেকু বসিয়ে মাটি তুলে বিক্রি করছে প্রভাবশালীরা। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে। ট্রাক-ড্রাম ট্রাক চলাচল করায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সড়কটি চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের পৌলি সেতুর পশ্চিম পাশ ও পৌলি রেল সেতুর পূর্ব পাড় থেকে অবৈধভাবে মাটি বিক্রি করছে প্রভাবশালীরা। দুই সেতুর পাশ থেকে অবৈধভাবে মাটি বিক্রির কারণে বিগত ২০১৭ সালের (২০ আগস্ট) রেল সেতুর অ্যাপ্রোচ ধসে যায়। এতে ঢাকার সাথে উত্তরবঙ্গের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও দুই সেতুর পাশ থেকে অবৈধভাবে মাটি বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে প্রাণনাশের হুমকি দেয় মাটি উত্তোলনকারীরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ মাটি বিক্রি বন্ধে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও তারপরই আবার মাটি বিক্রি শুরু হয়। এলাকাবাসী আরও জানান, মহেলা এলাকার পূর্বপাশে অবৈধভাবে দুটি ভেকু বসিয়ে বিএনপি নেতা শাহ আলমের নেতৃত্বে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। তার দুইশ মিটার পাশে মিয়া, সিকদার ও খানের নেতৃত্বে চারটি ভেকু বসিয়ে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।

মাটি বিক্রির কারণে বসতভিটা ও সড়ক হুমকির মুখে পড়েছে। কালিহাতী উপজলার মহেলা গ্রামের বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী হারেজ আলী বলেন, ধূলিবালুর কারনে বাড়িতেও থাকতে পারি না। এমন দুর্দশা ও দুর্ভোগ দেখার কি কেউ নেই। এমন কথাগুলোই বলেন। শুধু হারেজ আলী নয়, পৌলি নদী থেকে অবৈধভাবে মহেলা ও শালিনা গ্রামের শত শত মানুষের চরম দুর্ভাগ পোহাতে হচ্ছে। অবৈধভাবে মাটি বিক্রি বন্ধের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

সরেজমিনে দেখা যায়, পৌলি সেতুর দক্ষিণ পাশ দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ দিয়ে তিনটি ট্রাক মাটির জন্য ঘাটে যাচ্ছে। ধূলার কারণে সামনে কিছু দেখা যায় না। এছাড়াও বড় বড় গর্তের কারণে সড়কটি চলাচলের অনুপোযাগি। সড়কের একপাশে শ্রমিকরা পানি দিয়ে ধূলা নিরসনের চেষ্টা করছে। মহেলা গ্রামের রাজিব মিয়া বলেন, দিনের পর দিন এই দুর্ভাগের মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হয়। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে প্রভাবশালীদের লালিত সন্ত্রাসীরা প্রাণনাশের হুমকি দেয়। প্রশাসনকে অবগত করলেও কোন লাভ নেই। সকালে অভিযান করলে বিকেলে, আবার বিকেলে অভিযান করলে রাতে আবার অবৈধভাবে মাটি বিক্রি শুরু হয়। ওই এলাকার হাসনা বেগম বলেন, বালু উড়ে এসে বাড়িতে ও ঘরে প্রবেশ করে। এতে স্বাভাবিক চলাচল আমাদর বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। কার কাছে বলবো এর স্থায়ী সমাধান কবে হবে আমার জানা নেই। অবৈধ মাটি বিক্রি বন্ধের জন্য স্থায়ী সমাধান চাই।

শালিনা গ্রামর আলামিন বলেন, প্রতিদিন শত শত ট্রাক চলার কারনে শালিনা ও মহেলা গ্রামের পানি উনয়ন বোর্ডের প্রায় দুই কিলামিটার বাঁধ চলাচলের অনুপযোগী। আমাদের দুর্ভোগের সীমা নেই। আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই।

ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বিএনপি নেতা শাহ আলম কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়ে জমি পরিমাপ করছেন। শাহ আলম জানান, বিএনপি সমর্থন করার পরও বর্তমানে আমি মোটামুটি ভালই আছি। আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ঘাট চালানোর কারনে আমার ভাল দিন কাটছে। আপনারা আসছেন ছবি তুইলেন না। নিউজও করার প্রয়োজন নেই।

অপরজন মনির মিয়া বলেন, প্রশাসন ম্যানেজ করা আছে বলেই অভিযান হয়েছে। তারপরে দুপুরের পর আবার ঘাট চালু করছি। পাশের ঘাটে কথা হয় টাঙ্গাইল শহরের আদালতপাড়া ছাপড়া মসজিদ সংলগ্ন কাওছার মিয়ার সাথে। তিনি চেয়ার টেবিল নিয়ে মহেলা এলাকার ঘাটে বসে ট্রাক চালকদের রিসিট দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ট্রাক ও ভেকুর কাছে গিয়ে ছবি তুলেন, তাহলে স্পষ্ট আসবে। আর ছবি তুলেও লাভ নেই। সাংবাদিক ও প্রশাসন ম্যানেজ করা আছে।

কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুসেইন বলেন, অবৈধ মাটি বিক্রি বন্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পুলিশকে বলেছি তাদর বিরুদ্ধে নিয়মিত আইনে মামলা নিতে।

টাঙ্গাইল পানি উনয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এখানে অভিযানের জন্য জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বাঁধটি হুমকির মুখেই থেকে যাবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া খুব জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *