সখীপুর প্রতিনিধি: সখীপুরে উপজেলা পাট উন্নয়ন অফিসে নেই জনবল, প্রণোদনা না পেয়ে সোনালী আঁশ হিসেবে পরিচিত পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক। এক সময়ে পাট চাষ করা হলেও এখন নানা কারণে কৃষকদের মাঝে পাট চাষে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। পাট উন্নয়ন অফিসের অপারগতার কারণে পাটচাষে আগ্রহ হারাচ্ছে স্থানীয় কৃষক।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা উপজেলা কৃষি অফিসের প্রণোদনার অভাব, এলাকায় ভিত্তিক পাট জাগ দেওয়ার জায়গার সংকট, উৎপাদন খরচ বেশি হয়, স্থানীয় খাস খালগুলো ব্যক্তির দখলে, উঁচু পাট চাষের জমির মাটি বিক্রি করে ধান চাষের জন্য নির্মাণ করা ইত্যাদি কারণে কৃষক পাট চাষিরা উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছে।
আগে দুই ফসলী জমিগুলো আলু, সরিষা, গমসহ অন্যান্য রবিশস্যের আবাদের পরেই এসব জমিতে পাটের চাষ বীজ বপন করতো কৃষক। জমিতে উৎপন্ন পাট কোমর পানিতে নেমে কাটতো কৃষকরা। কাটা পাট আটি বেঁধে পঁচানোর জন্য স্থানীয় খাল ও নিজস্ব পুকুরে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হতো। পাটখড়ি থেকে আঁশ আলাদা করা উৎসব চলতো গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় খালের পাড়ে। কালের বিবর্তনে এখন আর এমন দৃশ্য মেলে না। দেখা যায় না বর্ষায় নৌকা বোঝাই করে বিক্রির উদ্দেশ্যে শুকনো পাট স্থানীয় হাটবাজারে নিয়ে যাওয়া। এছাড়াও গ্রামবাংলায় অসংখ্য কৃষক পরিবারের রান্না-বান্নার জ্বালানী ও ঘরের বেড়া তৈরীর কাজে পাট খড়ির ব্যবহার । পাটের সোনালী অতিত এখন কেবলই ইতিহাস। বিভিন্ন কারণেই এ উপজেলার কৃষকরা পাট চাষে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
উপজেলার যাদবপুর এলাকার নবাব বলেন, এক সময় পাট চাষ করতাম উপজেলার কৃষি অফিসের কোন প্রণোদনা পাই না, তাই আর চাষ করি না। পাটগাছ পঁচাতেও খাল বা ঝোড়ার সংকট।
দাড়িয়াপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড প্রতিমা বংকী এলাকার কৃষক হাসমত আলী বলেন, ‘গত বছর পাট চাষ করে লোকসানে পড়েছি। এজন্য এ বছর পাট চাষ করেননি। আমাদের এলাকায় পাট জাগ দেওয়ার জায়গার ভীষণ সংকট। এ সময় পুকুরেও পানি থাকে না। পাম্প দিয়ে প্রতিদিন সেচ দিয়ে পুকুরে পানি ভরে দিতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে। ফলে গত বছর পাট চাষ করে লোকসান হয়েছে। এ জন্য এ বছর আর চাষ করিনি।’
পাট উৎপাদনে চাষিদের সমস্যা বিষয়ে উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার বলেন মো.সাজ্জাদুর রহমান বলেন, এ বছর কৃষি অফিস থেকে চারশত কৃষকদের পাটের বীজ দিয়েছি। বিভিন্ন সমস্যায় কৃষক পাটচাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। প্রায় এলাকায় পাট গাছ থেকে পাট প্রস্তুত করতে যে পুকুর বা খাল প্রয়োজন তা নেই। সার-কীটনাশক, সেচ, পাট কাটা-ধোয়া ইত্যাদি যে হারে খরচ হয় সে অনুযায়ী লাভবান না হওয়ায় কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলার পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা সোলাইমান কবির বলেন, কিছুদিন হলো এ উপজেলায় আমি যোগদান করেছি। চাষিদের সেবা দিতে যে জনবল প্রয়োজন অফিসে নেই, আছে মাত্র দুইজন। দুই জনবল দিয়ে পুরো উপজেলার চাষিদের সেবা দেওয়া কষ্ট কর। যার কারণে আগের অফিসার সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পাট উৎপাদনে চাষিদের সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।