সখীপুর প্রতিনিধি: সখীপুরে ‘সরকারি সমাজকল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা’ নামের একটি এনজিও সংগঠন গ্রাহকদের প্রায় ১৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। উপজেলার কালিদাস বাজারে একটি ভবন ভাড়া নিয়ে ওই এনজিও অফিসের কার্যক্রম চলছিলো। সে সুবাদে কালিদাস, দড়িচালা, ঠকানিয়া পাড়া ও পানাউল্লাহপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ৩০জন ভুক্তভোগী এ এনজিও সংগঠনের প্রতারণার শিকার হয়। এ ঘটনায় বিপাকে পড়ে নিম্নআয়ের মানুষেগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে।
জানা যায়, গত ১লা এপ্রিল ‘সরকারি সমাজকল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা’ নামের একটি এনজিও উপজেলার কালিদাসের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনাসুদে শেলাই মেশিন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বিদেশ যাবার জন্য ঋণ দেওয়া হবে বলে গ্রাহক বানান। এক কৌশলে তারা ওইসব এলাকার প্রায় ৩০জনের থেকে ৩ লাখ টাকায় ৩০ হাজার, ৫ লাখ টাকায় ৫০-৬০ হাজার টাকা করে সঞ্চয় জমা নেন। সরকারি সমাজকল্যাণ এ কথা শুনে সরল বিশ্বাসে তাদের সঞ্চয় জমা করেন। রোববার (২ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে গ্রাহকদের মাঝে ঋণ বিতরণের কথা ছিল। এ অবস্থায় গ্রাহকদের কিছু না বলে ওই দিন সকালে এনজিও কর্মকর্তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
সাবিনা আক্তার বলেন, আমাদের বাড়িতে হঠাৎ করে ৫-৬জন লোক এসে বলে আমরা সরকারি সংস্থা সমাজকল্যাণ থেকে এসেছি। আপনারা ৩০-৫০ হাজার টাকা করে জমা দিলে, আমরা ৩-৫ লাখ টাকা করে ঋণ দিবো। আমরা তাদের কথার ফাঁদে পড়ে সঞ্চয় হিসেবে ওই টাকা জমা দিয়েছি। পরে ঋণ নিতে গিয়ে দেখি কার্যালয়ে তালা। ওই কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর বন্ধ। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
ঠকানিয়াপাড়ার জাহিদ মিয়া বলেন, আমরা গরীব মানুষ। প্রবাসী ঋণ, ব্যবসায়ী ঋণ দেওয়ার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে সঞ্চয় জমা নিয়েছে। মাসে ১লাখ টাকায় ৫হাজার টাকার কিস্তি দিতে হবে। ২৩ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। চারমাস পর থেকে কিস্তি নেওয়ার কথা ছিল। গরীবদেরই ১৪-১৫ লাখ টাকা নিয়েছে। ধনীরা লজ্জায় বলে না। টাকার পরিমাণ আরও বেশি হবে। আমরা গরীব মানুষ কি আর করতে পারবো। আল্লাহ যেন ওদের বিচার করে।
একইভাবে কবিতা, আজমেরি ও তাসলিমা বলেন, কোন ঋণ আমরা পাইনি। আমাদের জমার সব টাকা নিয়ে তারা পালিয়েছে।
এ বিষয়ে এনজিও কার্যালয়ের ভবন মালিক ফারুক হোসেনের স্ত্রী বলেন, (গত ১লা এপ্রিল) শনিবার মুঠোফোনে ওই এনজিও কর্মকর্তাদের সাথে আমার কথা হয়েছিল। ভবনের নিচতলা ও তিনতলা ভাড়া নেওয়ার কথা । এ বিষয়ে কিন্তু কোন চুক্তি হয়নি। পরের দিন রবিবার শুনতে পারি ওই এনজিও কর্মকর্তারা গ্রামের বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়েছে। ওই লোকদের আমি চিনি না। যে নম্বরে আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলো সে নম্বরটি এখন বন্ধ রয়েছে।
কালিদাস বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাকিম বলেন, এনজিও কর্মকর্তারা টাকা নিয়ে পালিয়ে যাবার পর ঘটনাটি জেনেছি। একদিন আগে একটি ঘর নিয়েছিলো। পরের দিন তারা উধাও হয়ে গেছে। বাজারের একটি দোকান থেকে বাকিতে চারটি ফ্যান, অন্য আরেক দোকান থেকে চেয়ার-টেবিল ভাড়া নিয়েছিল তারাও ক্ষতিগ্রস্থ। ওই এনজিওর কোন সাইনবোর্ড নাই। তাদেরকে কেউ চিনে না। তবে যারা টাকা দিয়েছে তাদের আরও সর্তক হওয়া উচিত ছিল। যাচাই-বাছাই না করে এভাবে টাকা দেওয়া ঠিক হয়নি।
সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, এনজিও কর্মকর্তারা গ্রাহকদের টাকা নিয়ে পালিয়েছে এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। এনজিও কর্মকর্তাদের কোন নাম ঠিকানা নাই। তাদের পরিচয়ও কেউ বলতে পারে না। তবে ম্যানেজারের একটা আইডি কার্ডের ফটোকপি ও সোনালি ব্যাংকের চেক বই ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পেয়েছি। ওই আইডি কার্ড ও চেকের মাধ্যমে প্রতারকদের ধরার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এনজিও কর্মকর্তা পরিচয়ে আখতারুজ্জামানের তিনটি মোবাইল নম্বর পাওয়া গেলেও সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।