ভুট্টা চাষে অল্প সময়ে বেশি লাভ হওয়ায় খুশি কৃষক

কৃষি ধনবাড়ী

ধনবাড়ী প্রতিনিধি: ধনবাড়ী উপজেলার কৃষকরা এবার অধিক পরিমাণে ভুট্টার আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে ও বাজারে ভুট্টার চাহিদা থাকায় বেজায় খুশি এ এলাকার ভুট্টা চাষিরা। পরিকল্পিকভাবে চাষ ও সঠিক পরিচর্যায় তিনগুণ লাভাবান হচ্ছেন তাঁরা। এবার ভুট্টা চাষে সাড়া ফেলেছে উপজেলা জুড়ে। ফলে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে কয়েকগুণ।

স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কম খরচে স্বল্প সময়ে লাভ বেশি ভুট্টায়। তেমন নেই কোনো রোগবালাই। তাই ধনবাড়ীর কৃষকরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। অন্য ফসল চাষ করে ভুট্টার তুলনায় কম টাকা পাওয়া যায়। বিকল্প ফসল হিসাবে এ দানা জাতীয় ফসল চাষে বেশি আগ্রহ। বর্ষার আগেই ঘরে তুলা যায় ভুট্টা। প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খচর হয়। বিঘায় ৩৫ থেকে ৪০ মণের অধিক হচ্ছে ভুট্টা। মাছ, হাঁস-মুরগী ও গো-খাদ্যের চাহিদা বাড়ায় দিন-দিন বাড়ছে এ আবাদ।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৭০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। বীজ রোপনের ১৪০-১৫০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে আসে। আগ্রহী চাষিদের দেয়া হয়েছে বীজ, সার, প্রদর্শনীসহ সকল পরামর্শ।

মুশুদ্দি এলাকার কৃষক মো. সানোয়ার হোসেন এবার ভুট্টা চাষ করেছেন ৫ বিঘা জমিতে। প্রতি বিঘায় তাঁর খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। তাকে জমি থেকে ভুট্টা সংগ্রহ করে রোদে শুকাতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ভালো ফলন হয়েছে। উন্নত জাতের ভুট্টা বিঘায় ৩৬ থেকে ৪০ মণের অধিক ফলন হচ্ছে। মাছ, হাঁস-মুরগী ও গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে।

স্থানীয় কৃষক আবুল হোসেন বলেন, সাড়ে চার বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। তেমন কোনো রোগ-বালাই নেই বললেই চলে। এক বিঘা জমির ভুট্টার বর্তমান বাজার মূল্য ৫০ হাজার টাকা।

দরচিন্দবাড়ী এলাকার কৃষাণী নুরজাহান বলেন, কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ভুট্টা আবাদ করেছি। বাড়িতে এসে পাইকাররা ভুট্টা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ভুট্টার গাছের পাতা গরুর খাবার ও কা- জ্বালনির কাজে ব্যবহৃত হয়।

কৃষক ওয়াহজে আলী বলেন, এবার ভুট্টার ফলন খুবই ভালো। দামটাও গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। সবাই লাভবান হতে পারবে বলে আশা করি।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি এলাকাতেই অধিক পরিমাণে ভুট্টা চাষ হয়েছে, এর ফলনও ভালো। কৃষকরা খেত থেকে ভুট্টার মোচা সংগ্রহে ব্যস্ত। অন্য ফসলের তুলনায় কৃষকরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। এক বিঘা জমিতে খরচ হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ফলন হচ্ছে প্রায় ৪০ মণের অধিক। অনেক কৃষক আগাম জাতের ভুট্টা চাষ করে অন্য ফসল আবাদ করেছেন ওই জমিতে। জমিতেই ভুট্টা শুকিয়ে মেশিনে মাড়াই করে বিক্রি করছে অনেকে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ফরিদ আহমেদ বলেন, পূর্বে এ উপজেলায় তেমন ভুট্টা চাষ হত না। বর্তমানে অনেক ভুট্টা আবাদ হচ্ছে। ভুট্টা চাষে খরচ কম, কম যত্ন নিতে হয় আবার ভালো ফলনও পাওয়া যায়। এতে কৃষকরা আগ্রহ ভরে এ আবাদে ঝুঁকেছেন। ফলে ভুট্টার আবাদে অনেক কৃষক স্বাবলম্বী।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, এবার ধনবাড়ীতে ভুট্টার আবাদ ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভুট্টা আবাদে কোনো বিপর্যয় দেখা দেয়নি। এছাড়াও আমরা কৃষকদের উন্নত বীজ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে সব সময়ই উদ্বুদ্ধ করে এসেছি। কৃষক পরিবারগুলো ভুট্টা চাষে সচ্ছল হয়ে লাভবান হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *