কালিহাতী প্রতিনিধি: রমজান মাস এলেই মুড়ির কদর বাড়ে। বিশেষ করে সারাদিন রোজা রেখে ইফতারিতে বুট মুড়ি না হলে বাঙালির ইফতারের উপাদান পুর্ণ হয় না। ধনী-গরীব নির্বিশেষে ইফতারের মুড়ি চাই-চাই। এ সময় রোজাদারগন স্বাস্থ্যসম্মত হাতে তৈরি মুড়ি বেশি প্রাধান্য দেন। যে কারনে রমজানে গৃহিনীদের হাতে ভাজা মুড়ির কদর বেড়েছে বহুগুণ। আর মুড়ি ভাজতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর ও মাইস্তা গ্রামের গৃহিনীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নে বাপ-দাদার এই পেশা ধরে রাখতেই দৌলতপুর ও মাইস্তা গ্রামের প্রায় চার শতাধিক পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে হাতে মুড়ি ভেজে। এর পাশাপাশি পুরুষেরা বাজারজাত করে থাকেন। গ্রাম দুটিতে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে -২০০ শত মণ মুড়ি ভাজা হয়। মুড়ি ভাজার জন্য চাল খোলা, বালু খোলা, ঝাইনজোর, চালুন ও পাটকাটি নামক সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হয়। এই সরঞ্জাম বাজারে কুমারের কাছ থেকেই পাওয়া যায়। একটি পাত্রে বালি ও একটি পাত্রে লবণ পানি মেশানো চাল রেখে চুলায় আগুনে তাপ দিতে হয়। পরিমাণ মতো তাপ শেষ হলে চাউল বালির পাত্রে ঢেলে ঝাঁকুনি দিয়ে পাশের ছামনিতে বসানো ঝাইজোরে (যা তলা ছিদ্রযুক্ত) পাত্র ঢেলে দেয়া হয় এরপর পরিস্কার মুড়ি পাওয়া যায়।
দৌলতপুর ও মাইস্তা গ্রামের হাতের তৈরি মুড়ির কারিগরদের মধ্যে দিপালী রাণী, দিবা রাণী, মহন্ত কান্তি ও লিপি সাহা জানান, প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর হতে দুপুর পর্যন্ত মুড়ি ভাজি। রমজানে এই কাজের চাপ বহুগুণ বেড়ে যায়।
মালতী দাস (২৮) জানান, আমার মা, খালারা ছোট সময় থেকেই মুড়ি ভেজে আমাদের বড় করেছে। আমার মা প্রায় ৫২ বছর যাবত মুড়ি ভাজার কাজে নিয়োজিত। আমার মা-খালাদের পেশাটাই ধরে রাখতে চাই। জানি না পারবো কি না। আমাদের হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা বেশি কিন্তু দামে বেশি না। হাতের ভাজা মুড়ির স্বাদের সাথে পাল্লা দিয়ে মেশিনের মুড়ির পারবে না। তাই দূর-দূরান্ত থেকে পাইকার এসে আমাদের তৈরি করা মুড়ি নিয়ে যায়। রমজানে মুড়ির চাহিদা বেশি থাকায় অনেকে অগ্রিম টাকাও দিয়ে যায়।
গোপাল চন্দ্র নামে এক কারিগর জানান, মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের কাজও কম নয়। ধান শুকানো থেকে শুরু করে সেই ধান মেশিনে ভাঙানো পর্যন্ত কাজ করতে হয় ছেলেদের। এরপর সেই চাল দিয়ে তৈরি করা মুড়ি বাজারজাত করতে হয় ছেলেদের। তিনি আরো জানান, বর্তমানে মুড়ি তৈরির উপাদানের সব জিনিষের দাম বেশি। কিন্তু মুড়ির দাম তুলনামুলকভাবে বাড়েনি। তবে এইটুকু হয়েছে যে চাহিদা বেশি থাকায় বাজারে যেতে হয় না। বাড়ীতেই অগ্রিম টাকা দিয়ে মুড়ি কিনে নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা।
নারান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ তালুকদার জানান, অত্র ইউনিয়নে প্রায় ১২শত হিন্দু সম্প্রাদায় লোক আছে। এর মধ্যে প্রায় চারশতাধিক পরিবার মুড়ি ভেজে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এই ব্যবসা চালাতে যে সব উপকরণ লাগে তা আমাদের বাজারেই পাওয়া যায়। এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যখন যা সম্ভব সহযোগিতা করে থাকি। এছাড়াও সরকার তাদের জন্য মুড়ির চাল সরবরাহ করলে তাদের পুঁজি করতে সহজ হতো।