গোপালপুর প্রতিনিধি: গোপালপুর উপজেলার আলমনগর ইউনিয়নের কামারকুমুল্লী গ্রামের জয়গন বেগম (৬৫)। তিনি বৃদ্ধা বিধবা ভাতা উঠাতে গেলে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে তাকে জানানো হয়, ভাতা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ তার জাতীয় পরিচয়পত্রে তিনি মৃত। পরে নির্বাচন অফিসে খোঁজখবর নিলে জানতে পারেন হালনাগাদ ভোটার তালিকায় তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। সেই থেকে এই বিধবা নারীর বিধবা ভাতা বন্ধ রয়েছে।
শুধু জয়গন বেগমই নন, উপজেলায় নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে হালনাগাদ করা ভোটার তালিকায় বিপুলসংখ্যক জীবিত মানুষকে মৃত হিসেবে দেখানো হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নানা কাজে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এ ধরনের ভুলের সঙ্গে সম্পৃক্ত যারা, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন এই সব ভুক্তভোগীরা।
আরেক ভুক্তভোগী ধোপাকান্দি ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের নিতাই চন্দ্র দাসের স্ত্রী সাবিত্রী রানী। তার অভিযোগ, ভোটার হালনাগাদের সময় মৃত তালিকায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গত ১৯ মার্চ মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারেন তিনি। পরে নির্বাচন অফিসে গেলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছ থেকে জীবিত থাকার সনদপত্রসহ আবেদন করতে বলা হয়।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে উপজেলার ২৭ জন মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়েছেন। আরও ২০৩ জনের প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে মোট ভোটার ২ লাখ ২৭ হাজার ২৩৫। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৪ হাজার ২২ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ১৩ হাজার ৭১২ জন।
জয়গনের নাতি রুমা (২৫) আক্তার জানান, নির্বাচন অফিস থেকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। পরে আলমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সঙ্গে যোগাযোগ করে তার কাছ প্রত্যয়নপত্র নিয়ে দাদিকে সশরীরে নির্বাচন অফিসে গিয়ে প্রমাণ করতে হয় তিনি জীবিত আছেন।
আলমনগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রুহুল আমীন জানান, যাদের নির্বাচন অফিস থেকে যারা ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা দায়িত্ব অবহেলা করেছেন। ফলে এই ইউনিয়নের অনেক জীবিতকে মৃত হিসেবে দেখানো হয়েছে।
আলমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মোমেন জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্যে ভুলের বিষয়টি আমি জানি। নির্বাচন অফিস থেকে ডেটাবেজে ভুল করেছে। ভুক্তভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্রে এমন ভুলগুলো সংশোধনে সহযোগিতা করছি।
গোপালপুর পৌরসভার মেয়র মো. রকিবুল হক সানা জানান, যাদের ভোটার তালিকায় মৃত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তারা পৌরসভায় যোগাযোগ করলে আমরা ঠিক করে দিচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য মাঠকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা সবাই ছিলেন স্কুলশিক্ষক-শিক্ষিকা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেন তারা। তাদের কাজের নিয়মাবলি শিখিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। জীবিতদের মৃত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
তিনি আরও জানান, ২০০৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত উপজেলায় ২৭ জন ব্যক্তিকে মৃত দেখানো হয়েছে। যাদের জীবিত অবস্থায় তথ্য হালনাগাদে মৃত দেখানো হয়েছে, তারা জীবিত ফরমে আবেদন করলে সেগুলো সংশোধন করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, এ ছাড়া ২০২২ সালের তথ্য হালনাগাদে আরও ২০৩জনের তথ্যে মৃত উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে সংশোধনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। অনুমতি পেলে এদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসফিয়া সিরাত জানান, ভোটার হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহকারীরা ২০৩ জন বিভিন্ন বয়সী জীবিত ব্যক্তিকে মৃত হিসেবে ভোটার হালনাগাদ তালিকায় ১২নং ফরমে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এরইমধ্যে ২৭ জনের ডাটাবেইজ সংশোধন করা হয়েছে। এনিয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ভোটার হালনাগাদের ডাটাবেইজ দেখে তা যাচাই-বাছাই করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও তথ্য সংগ্রহকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।