নিজস্ব প্রতিবেদক: মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৫ মার্চ রবিবার সন্তোষে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে।
জানা যায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় চ্যান্সেলর মহোদয় এবারের সমাবর্তনে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। তাঁর পক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি মহোদয় সভাপতিত্ব করবেন। সমাবর্তন বক্তৃতা প্রদান করবেন Ms. Valerie Ann Taylor. Founder & Coordinator, Center for the Rehabilitation of the Paralysed (CRP), Bangladesh. অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরি এমপি। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় সমাবর্তনে চ্যান্সেলর এওয়ার্ড পাচ্ছেন ২ জন শিক্ষার্থী ও ভাইস চ্যান্সেলর পদক পাচ্ছেন ৩জন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪,৪৩৩জন বিএসসি (অনার্স), মাস্টার্সের শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২,২৪৩জন শিক্ষার্থী সনদ নেবেন।
বিশ্বদ্যিালয়ের প্রশাসনিক অফিস সূত্রে জানা যায়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী তিনটি ক্যাটাগরি- চ্যান্সেলর, ভাইস চ্যান্সেলর এবং ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৬ খ্রি. বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সেসময় ২০১৪ খ্রি. বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিনেন্স মোতাবেক বিএসসি, অনার্স ও মাস্টার্স মিলিয়ে সর্বমোট চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ছিল ৬জন শিক্ষার্থী, ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ৭জন শিক্ষার্থী এবং ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ছিল ৩০জন শিক্ষার্থী। তবে এবার নতুন নীতিমালা অনুযায়ী চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড-এর জন্য ৩.৯৮ CGPA প্রাপ্ত এবং ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড-এর জন্য ৩.৯৬ CGPA প্রাপ্ত হতে হবে। এছাড়া প্রতি শিক্ষাবর্ষে প্রতিটি অনুষদে সর্ব্বোচ CGPA প্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে প্রাইম মিনিস্টার অ্যাওয়ার্ড প্রদান করার কারণে একই শিক্ষার্থীকে পুনরায় ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করার প্রয়োজন নেই বিধায় তা বাতিল করা হয়। সর্বশেষ নীতিমালার বিবেচনায় এবার পদক পাচ্ছেন মাত্র ৫জন শিক্ষার্থী।
এবার ৩য় সমাবর্তন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে মোট ২১টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। মূল কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোঃ ফরহাদ হোসেন আর সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ড. মোহা. তৌহিদুল ইসলাম।
এবারের সমাবর্তনে রেজিস্ট্রেশন ১,৭২৮জন শিক্ষার্থী করলেও বিশ্ববিদ্যালের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা সাম্প্রতিক সময়ে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় রেজিস্ট্রেশন ফি দেড় থেকে দ্বিগুন বেশি নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
৩য় সমাবর্তন প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালের সাবেক ও বর্তমান ৩৭জন শিক্ষার্থী এক লিখিত অভিযোগে জানান, তৃতীয় সমাবর্তনের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পদক প্রদানের নীতিমালায় পরিবর্তন আনে যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এতে করে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে যা মোটেও কাম্য নয়। তারা নতুন নিয়মটি বাতিলের দাবী জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কেবলমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এইরকম একটি অবমাননাকর নিয়ম পাশ করা হয়েছে, যা বর্তমান এবং ভবিষ্যত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনায় মারাত্মকভাবে নিরুৎসাহিত করবে।
উপরোক্ত বিষয়সমূহের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তারা জানান, এ বিষয়ে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন হয়েছে এবং তারা ভিসি মহোদয়ের সাথে কথা বলতে পরামর্শ দেন। তাদের মধ্যে দু’একজন নতুন নীতিমালার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও কেউ নিজ নাম উল্লেখ করে সংবাদপত্রের জন্য কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এছাড়া জানা যায়, গতকাল ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল পর্যন্ত সমাবর্তনের আমন্ত্রণপত্র ঢাকা থেকে ছাপা শেষ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেনি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানালেন, আগামীকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে আমন্ত্রণপত্র হাতে পেয়ে বিতরণ শুরু করবেন।
সমাবর্তন বিষয়ে কেন্দ্রিয় গ্রন্থাগারের সম্মুখে গতকাল ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের সাথে। শিক্ষার্থীরা জানান, সমাবর্তন হবে জানতে পেরেছেন। কিন্তু বিস্তারিত কিছু আমরা বলতে পারছি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোঃ ফরহাদ হোসেন প্রশাসনিক কাজে ঢাকা অবস্থান করছেন। তিনি মুঠোফোনে জানান, আগামী ৫ মার্চ যথারীতি তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হচ্ছে। অ্যাওয়ার্ড প্রদানের বিষয়ে তিনি জানান, ইতিপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সঠিক নীতিমালা ছিল না। ২০১৪ সালের অর্ডিনেন্সটিও যথার্থ ছিল না। আমাদের একটি নতুন নীতিমালা রিজেন্ট বোর্ডে অনুমোদন করে দিয়েছে। সে অনুসারে এ বছর সব্বোর্চ ফলাফলধারী মেধাবী ৫জন শিক্ষার্থী অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন।