সখীপুর প্রতিনিধি: সখীপুর উপজেলার ১নং কাকড়াজান ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন জুতা ছাড়াই ২৩ বছর ধরে হাঁটছেন। তিনি ঘুরছেন সব জায়গায়। এতে এলাকার মানুষ তাকে ‘জুতা ছাড়া মেম্বার’ উপাধি দিয়েছে।
জয়নাল আবেদীন কাকড়াজান ইউনিয়নের মহানন্দাপুর বাশার চালা গ্রামের মৃত গফুর মিয়ার ছেলে। বর্তমানে তিনি মুরগির খাবারের ব্যবসা করেন। সাবেক ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন খালি পায়ে স্থানীয় বাজারে পিচঢালা পথে হাঁটাচলা করছেন। এছাড়াও খালে পায়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন অনায়াসে। এতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তার।
জানা গেছে, জয়নাল আবেদীন ১৯৬৯ সালে কালিহাতী উপজেলার আউলিয়াবাদ কলেজে অফিস সহকারী পদে যোগদান করেন। ২০০০ সালে চাকরি থেকে অবসরে যান। ২০০০ সাল থেকে তিনি পীরের আদেশে পায়ে জুতা পড়া থেকে বিরত থাকেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০২ এবং ২০১৬ থেকে ২০২১ সালে পর্যন্ত তিনি কাকড়াজান ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিলেন।
পার্শ্ববর্তী উপজেলা কালিহাতীর আউলিয়াবাদ কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরির করার সুবাদে সেখানকার একজন পল্লী চিকিৎসক আজহারুল ইসলাম পীরের মুরিদ হন জয়নাল আবেদীন। সেই পীরের আদেশে তিনি দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পায়ে জুতা ছাড়াই হাঁটাচলা করছেন। ইউপি সদস্য ছাড়াও তিনি কয়েকবার প্যানেল চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে কখনো জুতা পরেননি। এছাড়া ঢাকায় সচিবালয়সহ জেলা ও উপজেলার অফিস আদালতেও গিয়েছেন পায়ে জুতা পরা ছাড়া। এছাড়া শীত, বর্ষায়, মসজিদ, মাদরাসায় যান খালি পায়ে। প্রথম অবস্থায় স্থানীয়রা মেম্বারের জুতা না পরা নিয়ে কটূক্তি করলেও পরে পীরের কথা শুনে আর কিছু বলেন না।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মেম্বার খালি পায়ে হাঁটেন। তিনি পীর ধরা মানুষ। পীরের নির্দেশে নাকি পায়ে জুতা পরেন না। তবে মানুষ পায়ে জুতা ছাড়া হাঁটতে পারে তাকে না দেখলে বুঝা যাবে না। তিনি জুতা ছাড়াই অফিস আদালতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘুরে বেড়ান। প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামে খালি পায়ে হেটে নির্বাচন করেছেন। অথচ পায়ে কোনো রোগ বা সমস্যা হয়নি। তিনি এলাকায় জুতা ছাড়া মেম্বার বলে পরিচিত।
জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী শেফালী বলেন, প্রথম দিকে লোকজনের কটূক্তির কারণে বারবার জুতা পরার বিষয়ে বলেছি। কিন্তু তার পীরের কারণে সে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দীর্ঘ বছর ধরে তিনি পায়ে জুতা পরেন না। বাড়িতে আসলে তার জন্য পানি রেখে দেওয়া হয় ঘরের সামনে পা ধোয়ার জন্য। এতে তার কোনো পায়ের সমস্যা হয়নি। এলাকার সবাই তাকে জুতা ছাড়া মেম্বার হিসেবে চেনে।
জয়নাল আবেদীন বলেন, পীরের আদেশে আদিষ্ট হয়ে দীর্ঘবছর পায়ে জুতা ছাড়া পথ চলছি। তাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে। এতে খুব ভালো আছি। মাঠের পর মাঠ, গ্রামের পর গ্রাম হেঁটে বেরিয়েছি, এখনো হাঁটছি। এছাড়াও পায়ে জুতা ছাড়াই সচিবালয়, ডিসি ও ইউএনও অফিসেও গিয়েছি। জানি না আর কত বছর এভাবে থাকতে হবে। বড় ধরনের কোনো রোগব্যাধি হয়নি। খুব ভালো আছি।
জয়নাল আবেদীনের পীর আজহারুল ইসলাম বলেন, তাকে পরীক্ষা করার জন্য এই আদেশ দেওয়া হয়েছিল, যাতে সে পায়ে জুতা না পরে। সে পরীক্ষায় শতভাগ পাস করেছে। খুব দ্রুতই আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে জুতা পরার নির্দেশ দেওয়া হবে।
উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন বলেন, জয়নাল আবেদীন তার পীরের আদেশে জুতা পরেন না। তবে মেম্বার হিসেবে তার জনপ্রিয়তা ছিল। তাকে সবাই জুতা ছাড়া মেম্বার হিসেবে জানে। পায়ে জুতা ছাড়াই তিনি নির্বাচন করেছেন।