মধুপুরে অতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগে চাষ হচ্ছে কলার!

কৃষি মধুপুর

মধুপুর প্রতিনিধি: মধুপুর উপজেলায় অতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগে চাষ হচ্ছে কলার। কলা চাষিরা গাছে থাকা অবস্থা থেকে শুরু করে গাছ থেকে পাড়ার পর পর্যন্ত ধাপে ধাপে রাসায়নিক ব্যবহার করছেন। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, তারা নন, বরং উপজেলার বাইরের লোকজন এসে জমি বর্গা নিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কলা চাষ করছেন; অতিরিক্ত লাভের আশায় তারাই বেশি রাসায়নিক ব্যবহার করছেন।

টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম জানান, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা ফল খেলে শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। শ্বাসকষ্ট, শরীরে লবণ কমে যাওয়া, এমনকি কিডনির জটিলতা ও ক্যানসারের ঝুঁকিও রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, মধুপুর গড় এলাকায় অনেক আগে থেকে কলা চাষ হতো। তবে দুই দশক ধরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কলা চাষ শুরু হয়। লাভজনক ফসল হওয়ায় বাইরে থেকে বিনিয়োগকারীরা আসছেন। তাঁরা স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে কলার আবাদ করছেন। গ্রামাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হওয়ায় এখন সহজেই কলা বাজারজাত করা যায়। বাইরে থেকে আসা অনেক বিনিয়োগকারীর মধ্যে রাসায়নিক ব্যবহারের প্রবণতা বেশি।

স্থানীয় কলাচাষিরা বলেন, কলাগাছের চারা রোপণের পর থেকে ফল বড় ও সুন্দর করা, দ্রুত পাকানো এবং রং আকর্ষণীয় করতে কয়েক ধাপে রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত কলাগাছ রোপণ করা হয়। গোবর সারের পাশাপাশি রাসায়নিক সার দিয়ে চারা রোপণ করা হয়। তারপর পরিচর্যা করে চারা বড় করা হয়। কলাগাছ বড় হওয়ার পর পানামসহ বিভিন্ন রোগমুক্ত রাখতে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা হয়। পরে কলার ছড়ি একটু বড় হলে এর ফুল (থোর) কেটে ফেলা হয়। তখন কলাকে সুন্দর ও বড় করার জন্য প্লানোফিক্স, সুপারফিক্সসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দেওয়া হয়। এ ছাড়া কলা পাকানোর জন্য এবং রং আকর্ষণীয় করতে রাইপেন, ইথিপ্লাস, ইথোফেন গ্রুপের নানা রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়।

উপজেলার মহিষমারা গ্রামের মো. শাহজাহান দেড় একর জমিতে কলা চাষ করেছেন। তিনি জানান, স্থানীয় ছোট চাষিরা সাধারণত রাসায়নিক প্রয়োগ করেন না। কারণ, তাঁরা বাণিজ্যিকভাবে বা ব্যবসার জন্য কলা চাষ করেন না। কিন্তু বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা লাভের আশায় মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করেন। বাজারে কলা বিক্রির পর ব্যবসায়ীরা কলা একসঙ্গে পাকানো ও রং আকর্ষণীয় করার জন্য রাসায়নিক দিয়ে থাকেন। ফল পাকানোর জন্য প্রতি লিটারে এক মিলি কেমিক্যাল সহনীয়। কিন্তু অতি মুনাফার আশায় লিটারে ১০-১৫ মিলি কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকেন অনেকে।

উপজেলার জয়নাতলী গ্রামের আবদুল খালেক জানান, কেমিক্যাল ব্যবহার করলে কলার রং সুন্দর হয়। ক্রেতারা সহজেই আকৃষ্ট হন। আর কেমিক্যাল ব্যবহার না করলে রং সুন্দর হয় না। তাই ব্যবসায়ীরা পাকানোর জন্য কেমিক্যাল প্রয়োগ করেন।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, মধুপুর অঞ্চলের কলা সাধারণত জলছত্র এবং গারোবাজার এলাকা থেকে বাজারজাত করা হয়। মৌসুমে প্রতি রবি ও বুধবার গারোবাজার থেকে ২৫-৩০ ট্রাক কলা দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এ ছাড়া জলছত্র থেকে সোম ও বৃহস্পতিবার হাটবারে ৫০-৬০ ট্রাক কলা বিক্রি হয়। এসব বাজারে সরকারের কোনো লোক থাকে না রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ জানান, কলা চাষ থেকে পাকানো পর্যন্ত অতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করায় মানব শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অতিরিক্ত যে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, এ মৌসুমে মধুপুর উপজেলায় ২ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে আড়াই লাখ মেট্রিক টন। কৃষকদের নিয়ম মেনে সার কীটনাশক প্রয়োগ এবং রাসায়নিক ব্যবহার না করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্বুদ্ধ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *