ঘাটাইল প্রতিনিধি: ঘাটাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির বর্তমান অবৈধ এডহক কমিটির সভাপতি এমরান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান-এর বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতির প্রায় ৭২লক্ষ টাকা অপচয় ও আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষকবৃন্দ।
রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ঘাটাইল প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলার আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অর্চনা পাল, হুমায়ুন কবির, আঃ মালেক, আঃ রহমান, আয়নাল হক, শাহাদাত হোসেন কামাল, অনুপ আচার্য, আশরাফুল ইসলাম সুজন, আবুবকর সিদ্দিক, দিলোয়ারা বেগম, নজরুল ইসলাম ও গোলাম মোস্তফাসহ কথিত কমিটি থেকে পদত্যাগকৃত শিক্ষক আনোয়ার হোসেন সেলিম ও রশিদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে চতিলা শিমলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অর্চনা পাল লিখিত বক্তব্য পাঠকালে বলেন, ঘাটাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির বর্তমান অবৈধ এডহক কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্নসাৎ-এর বিরুদ্ধে আমরা সাধারণ শিক্ষকগণ বিগত ১৭ জুলাই তারিখে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দাখিল করি। অভিযোগের প্রতিকার না পেয়ে ৪ আগস্ট তারিখ সমিতির ভবনের সামনে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষকের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে মানববন্ধন করি। যা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রচারিত হয়।
চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২০ জানুয়ারি ‘২৩ইং তারিখে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা আজ রবিবার বেলা ১০ঘটিকায় সমিতির ভবনে এক শান্তিপূর্ণ ‘শিক্ষক সমাবেশ’ আহ্বান করি। উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সম্মানিত সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম লেবুসহ ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেন। কিন্তু বর্তমান অবৈধ এডহক কমিটির সভাপতি এমরান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান সাধারণ শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ শিক্ষক সমাবেশকে পন্ড করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাদের আন্দোলনকারী ৪জন শিক্ষকের নামে থানায় জিডি করেন। যার প্রেক্ষিতে প্রশাসনের বাধায় আমরা আমাদের দাবি আদায়ের অধিকার থেকে বঞ্চিত হই।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাদের আজকের কর্মসূচি বন্ধ করলেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। প্রসঙ্গত বলতে চাই, ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় এমরান ও নাজমুল হোসেন এর নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষক ও বহিরাগত কিছু লোকজন নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসে এমরান হোসেন নিজেকে সভাপতি ও নাজমুল হোসেন নিজেকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন। তারা পূর্বের কমিটির নিকট থেকে কোন দায়িত্বভার বুঝে না নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে সমিতি পরিচালনা করে আসছেন। বিগত সময়ে তারা সমিতির প্রায় ৭২ লক্ষ টাকা বিভিন্নভাবে অপচয় ও আত্মসাৎ করেছেন।
জানা যায়, ঘাটাইল উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি মার্কেট থেকে সমিতির বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় হয়। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে নামে-বেনামে বিভিন্ন বিল ভাউচার ব্যবহার করে সমিতির বিতর্কিত কমিটির নেতা নামধারী অভিযুক্ত শিক্ষকরা নিজেদের দাম্ভিকতা দেখিয়ে শিক্ষক সমিতির টাকায় ভোগ করছেন। ইতিপূর্বে এ বিষয়ে কেউ এককভাবে সাহস করে মুখ না খুললেও এখন সকল সাধারণ শিক্ষক একজোট হয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন।
অভিযুক্ত নেতাদের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাজী মুহাঃ সাজ্জাদুর রহমান খোশনবীশ বলেন, ‘ঘাটাইল উপজেলায় আমাদের অনুমোদিত কোন কমিটি নেই। অবৈধভাবে সমিতির নাম ভাঙিয়ে নেতা নামধারী কোন অসাধু শিক্ষক যদি অর্থ আত্মসাতসহ কোন প্রকার দূর্নীতি বা অনিয়মের সাথে যুক্ত থাকে তার দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে। দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের অপকর্মের দায়ভার বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি বহন করবে না।’