
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের যৌন নিপীড়নের মামলায় ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীসহ দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ। এছাড়া লুণ্ঠিত টাকা, মোবাইল ফোন, গয়না, জাতীয় পরিচয়পত্র, এটিএম কার্ডসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়।
২৫ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তাঁর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন- ডাকাতির ঘটনায় পরিকল্পনাকারী আলমগীর হোসেন ও তার সহযোগী হিসেবে থাকা ছোট ভাই রাজীব হোসেন। তারা মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার আমতলী গ্রামের খোরশেদ শেখের ছেলে। গতকাল সোমবার রাতে আলমগীরকে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার সাধুপাড়া গ্রাম থেকে এবং রাজীবকে আশুলিয়া থানার ধানসোনা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ রাজীবের হেফাজতে থাকা ১০টি মোবাইল ফোন, নারী যাত্রীদের পাঁচ জোড়া চুড়ি, তিনটি ব্যাগ, তিনটি জাতীয় পরিচয়পত্র ও একটি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি ছুরিও জব্দ করা হয়।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, আগের গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য এবং গুপ্তচরদের তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বাস ডাকাতির পরিকল্পনাকারী হলেন আলমগীর হোসেন এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল বা মুহিত, যাকে গত বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে গ্রেপ্তার করা হয় মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল বা মুহিত (২৯) মো. সবুজ (৩০) ও মো. শরিফুজ্জামান ওরফে শরীফকে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে ইউনিক রয়েল আমরি ট্রাভেলস নামক বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। বাসটি ঢাকা থেকে রাজশাহী যাচ্ছিল।
বাসের যাত্রীদের ভাষ্যমতে, গত সোমবার রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাসটি ছাড়ে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাসটিতে ডাকাতেরা অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে বাসটি বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ডাকাতি ও দুই নারীকে যৌন নিপীড়ন করে ডাকাতদল।
পরদিন গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার পর যাত্রীরা বাসটি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় নিয়ে থানা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। এ সময় ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বাসের চালক বাবলু আলী (৩০), সুপারভাইজার সুমন ইসলাম (৩৩) ও হেলপার মাহবুব আলমকে (২৮) আটক করে ৫৪ ধারায় নাটোর আদালতে পাঠায় বড়াইগ্রাম থানার পুলিশ। পরে তারা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান।
ঘটনার তিন দিন পর ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে মির্জাপুর থানায় ওমর আলী নামে এক যাত্রী মামলা করেন। মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে নামে এবং মামলা হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল বা মুহিত, মো. সবুজ ও মো. শরীফুজ্জামান ওরফে শরীফকে গ্রেপ্তার করে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় মামলা হওয়ার পরই আমাদের টিম মাঠে কাজ শুরু করে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমাদের একটি টিম সাভারে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। সোমবার দিবাগত রাতে গ্রেপ্তার করা হয় আলমগীর হোসেন ও রাজীব হোসেনকে। বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত ও অভিযান চলমান রয়েছে। পুরো বিষয়টি আমাদের নখদর্পণে চলে এসেছে।’