কালিহাতীতে সংবাদ প্রকাশের জেরে ধর্ষণচেষ্টা মামলা: মধ্যরাতে সাংবাদিক গ্রেফতার

অপরাধ আইন আদালত কালিহাতী মিডিয়া

কালিহাতী প্রতিনিধি: কালিহাতীতে সংবাদ প্রকাশের জেরে মিথ্যা মামলায় মধ্যরাতে এক সাংবাদিককে মারধর ও গ্রেফতারের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। শনিবার, ৬ ডিসেম্বর রাত ২টার দিকে নিজ বাড়ি উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের নারান্দিয়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

রবিবার বিকেলে পুলিশ আদালতের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরকে কারাগারে পাঠায়৷ এ ঘটনায় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গ্রেফতারকৃত জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক নিরপেক্ষ পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি। এছাড়া তিনি কালিহাতী প্রেসক্লাবের সদস্য।

 

সাংবাদিক ও স্থানীয়রা জানান, গত ২০ আগস্ট কালিহাতীতে শওকত তালুকদার নামে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রীর বিরুদ্ধে ৩০ লাখ টাকার প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়।

শওকত তালুকদার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের খবর সংগ্রহ ও প্রকাশ করেন জাহাঙ্গীর আলম। নিউজের পর সাংবাদিক জাহাঙ্গীরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকেন শওকতের স্ত্রী। সেই সংবাদের জের ধরে গত ১৭ নভেম্বর শওকত তালুকদারের স্ত্রী বাদী হয়ে জাহাঙ্গীরের নামে ধর্ষণচেষ্টা মামলা করেন।

স্থানীয় সাংবাদিকরা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা দ্রুতই জাহাঙ্গীরের মুক্তির দাবি করেছেন।

জাহাঙ্গীরের পরিবারের সদস্যরা বলেন, রাত ২টার দিকে ঘরের পেছনের গেট এবং টিনের বেড়া ভেঙে যেভাবে পুলিশ সদস্যরা প্রবেশ করেছিল, তাতে মনে হয়েছিল কোনো ডাকাত দল প্রবেশ করেছে।

সাংবাদিক জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। রাত দুইটার দিকে পেছনের গেট এবং টিনের বেড়া ভেঙে বাড়ির সামনে প্রবেশ করে। এসময় বাবা মা ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করেন। পরে আমি ও আমার ভাই বাইরে বের হই। এসময় তারা আমার ভাইয়ের সঙ্গে ধস্তাধস্তি এবং মারধর করে নিয়ে যায়। কিন্তু কোন মামলায় কিংবা কী কারণে গ্রেফতার করেছে সে সময় তা তারা কিছুই বলেনি। এভাবে হয়রানি করে গ্রেফতারের বিচার দাবি করছি। জাহাঙ্গীরের দ্রুত মুক্তির দাবি করছি।

কালিহাতী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মুশফিকুর রহমান মিল্টন বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি মেয়েকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। ওই মেয়ে তার স্বামীর কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করায় আদালতে প্রতারণার মামলা রয়েছে। মূলত ওই নারীর নামে সংবাদ প্রকাশ করায় এমন মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা সাংবাদিক জাহাঙ্গীরের দ্রুত মুক্তির দাবি করছি।

পুলিশ জানায়, ভুক্তভোগী ওই নারী প্রথমে টাঙ্গাইল আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত টাঙ্গাইল সদর থানা পুলিশকে মামলাটি এফআইআর করার নির্দেশ দেন।

টাঙ্গাইল সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রিপন কুমার দাস বলেন, ‘পেছনের টিন সরিয়ে দিয়ে কালিহাতী থানার পুলিশের সহযোগিতায় আমরা জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করেছি। তার নামে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা রয়েছে। জাহাঙ্গীরকে মারধর করা হয়নি। বরং তারা আমাদের দেখে উত্তেজিত হয়েছিল।’

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা মামলা হয়েছে। তবে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সেটা তদন্ত করে দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *