নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে প্রায় চার বছর আগে নিহত রফিকুল হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর ভগ্নিপতিকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।
মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান পিবিআইয়ের টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন তালুকদার। নিহত রফিকুল ইসলাম ধনবাড়ী উপজেলার নাথেরপাড়া গ্রামের প্রয়াত আবদুল খালেকের ছেলে।
জানা যায়, ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রায় চার বছর আগে বাড়ির পাশে একটি ঝোপ থেকে রফিকুল ইসলামের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলার পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তে নামলে স্বজনেরা কোনো সহযোগিতা করছিলেন না। হত্যাকাণ্ডের তিন বছর আট মাস পর একজনকে গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধের জেরে রফিকুলকে তাঁর আপন ভাই, ভগ্নিপতি, তিন মামা ও মামাতো ভাইয়েরা মিলে হত্যা করেন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত রোববার রাতে নিহত রফিকুলের ভগ্নিপতি মকবুল হোসেনকে (৫৫) গ্রেপ্তার করে পিবিআই। গতকাল সোমবার তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। টাঙ্গাইলের চিফ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মিনহাজ উদ্দিন ফরাজী তাঁর জবানবন্দি রেকর্ডের পর কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন তালুকদার বলেন, মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পরদিন নিহত রফিকুলের মা ছাহেরা বেওয়া বাদী হয়ে ধনবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইয়ের কাছে। শুরু থেকেই মামলার তদন্তে রফিকুলের পরিবারের লোকজন অসহযোগিতা করতেন। একপর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তা জানতে পারেন, রফিকুলের সঙ্গে তাঁর স্বজনদের বিরোধ ছিল। পরে প্রথাগত ও প্রযুক্তিগত তদন্তের মাধ্যমে ঘটনায় রফিকুলের ভগ্নিপতি মকবুল হোসেনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসে। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন এবং জড়িত অন্যদের নাম প্রকাশ করেন।
সালাহউদ্দিন তালুকদার আরও বলেন, আদালতে জবানবন্দিতে মকবুল জানিয়েছেন, মায়ের ওয়ারিশের সম্পত্তি মামাদের কাছে চাওয়া ও এক মামার কয়েকটি গরু চুরি নিয়ে তিন মামা ও মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে রফিকুলের বিরোধ ছিল। জমির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে আপন ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল না। তাঁর (মকবুল) ঘর ভাঙচুর করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ জন্য রফিকুলের ওপর তিনিও ক্ষুব্ধ ছিলেন। ঘটনার কয়েকদিন আগে রফিকুলের মামা রেহানের বাড়িতে মকবুল, ভাই হাফিজুল, তিন মামা রেহান, জলিল ও সেকান্দার এবং মামাতো ভাই আলম বৈঠক করেন। সেখানে রফিকুলকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন মাদক সেবনের কথা বলে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রফিকুলকে তাঁর মামাতো ভাই আলম নির্জন একটি ধানখেতে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর ভগ্নিপতি, ভাই ও মামারা লাঠি দিয়ে রফিকুলকে পেটাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মামাতো ভাই চাপাতি দিয়ে মাথা ও মুখে আঘাত করেন। এতে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে মরদেহ পাশের একটি ঝোপে ফেলে রাখেন। তিনি আরো জানান, অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।