নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টায় সরকারি ছুটির দিনে বিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে প্রায় শতাধিক অভিভাবককে পক্ষে নিয়ে তদন্ত করার অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম জাকারিয়া হায়দারের বিরুদ্ধে।
বুধবার, ২০ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ওই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এর আগে টাঙ্গাইলের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লাইব্রেরীতে গোপন পরীক্ষা: ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা এবং 'মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লাইব্রেরী কক্ষে গোপনে নেয়া হলো কোচিং সেন্টারের সাত শিক্ষার্থীর প্রথম সাময়িক পরীক্ষা' শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়।
তদন্তে গোপনে প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় অংশ নেয়া ও সম্প্রতি ভর্তি করা পঞ্চম শ্রেণীর ওই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি বঞ্চিত করাসহ কোচিং সেন্টারে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের গোপনে বিদ্যালয়ে ভর্তি দেখিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ সহকারি শিক্ষকদের একটি সিন্ডিকেটের ধারাবাহিক এমন অপকর্মের প্রতিবাদ করা অভিভাবকদের না ডাকারও অভিযোগ রয়েছে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এছাড়াও তদন্ত কর্মকর্তা জাকারিয়া হায়দারের পরামর্শে অভিযোগ উঠা তথ্য সত্য নয় মর্মে কর্মরত সহকারি শিক্ষক ও অভিভাবকদের স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক নিশ্চিত করেছেন।
অভিভাবক কানিজ রওশন বলেন, সরকারি ছুটির দিনে তদন্ত কার্যক্রম চালানো হয়েছে। তদন্তের ব্যাপারেও শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। আমি কিন্তু অভিযোগকারী। আজকে সকালে বিদ্যালয়ে কর্মরত সহকারি শিক্ষক স্বপন ফোনে আমাকে জানায় অভিভাবক মিটিং আছে। বন্ধের দিন সকল অভিভাবককে ছাড়া কেন মিটিং ডাকা হলো এমন প্রশ্নের উত্তর দেননি ওই শিক্ষক।
কানিজ রওশন আরও জানান, সম্প্রতি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুর্নীতি তুলে ধরায় অভিভাবককে ভয় ভীতি দেখানো প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত একটি অভিযোগ দিয়েছি। এছাড়া দুর্নীতির তথ্য সাংবাদিকদের দেয়া ও সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত দুই মেয়েসহ আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ কারণে আমি দুই মেয়ে নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। নিরাপত্তা শঙ্কায় সহকারি শিক্ষক স্বপনের ফোনে আমি ওই মিটিং এ উপস্থিত হইনি।
তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম জাকারিয়া হায়দার জানান, তদন্ত বিদ্যালয় বন্ধ ও খোলার দিন হতেই পারে। সংবাদে উঠা অভিযোগের সত্যতা যাচাই ও শিক্ষকরা একজন শিক্ষার্থী নাকি সকল শিক্ষার্থীর সাথে খারাপ আচরণ করেনসহ গোপনে লাইব্রেরী কক্ষে কোচিং সেন্টারে পড়ুয়া সাত শিক্ষার্থীর সম্প্রতি প্রথম সাময়িক পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগের তদন্তে অভিভাবকদের উপস্থিত করা হয়েছিল। প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নেয়া ও উনার পরামর্শে মূল ফটকে তালা দেয়াসহ সহকারি শিক্ষক, গোপনে পরীক্ষা দেয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবক আর উপস্থিতি অভিভাবকদের স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে কেন এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি।
এদিকে, সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা না বলে মুঠোফোনের লাইন কেটে বন্ধ করে দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তসলিমা জাহান। একাধিকবার মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাহাব উদ্দিন।
উল্লেখ্য, টাঙ্গাইলের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লাইব্রেরীতে সাত শিক্ষার্থীর গোপনে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা নেয়ারসহ ৫ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিতে বেসরকারি লিটন একাডেমির ও অন্যান্য কোচিং এর ওই সাত শিক্ষার্থীকে সম্প্রতি ভর্তি করাসহ প্রথম সাময়িক পরীক্ষা নেয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকরা।