নিজস্ব প্রতিবেদক: আবারো ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও দুই নারী যাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় মামলা হয়েছে। বুধবার বিকেলে বাসের যাত্রী ও রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার আবদুল্লাহপুর কাশিয়াবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা মিনু মিয়া বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলেঙ্গায় এ ঘটনা ঘটে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানভীর আহমদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মামলার পর ডাকাত দলকে চিহ্নিত করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গতকাল মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে রংপুরের উদ্দেশে আল ইমরান নামের বাসটিতে ওঠেন তিনি। বাসটি পথে সাভারের নরসিংহপুর, বাইপাইল, আশুলিয়া থেকে আরও কয়েকজন যাত্রী ওঠায়। বাসটি রাত সাড়ে ১১টার দিকে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা অতিক্রম করে। যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কের কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর যাত্রীবেশে ৮ থেকে ১০ জন ডাকাত ছুরি, চাপাতিসহ দেশি অস্ত্রের মুখে চালকের কাছ থেকে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে তারা বাসের চালকসহ যাত্রীদের সবার চোখ–মুখ বেঁধে ফেলে। যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্তের গোলচত্বর এলাকায় গিয়ে বাসটি ঘুরিয়ে আবার ঢাকার দিকে চলতে থাকে।
এজাহারে আরও বলা হয়, চলাচলের সময় প্রত্যেক যাত্রীকে তল্লাশি করে মুঠোফোন, টাকা, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মালামাল লুটে নেয় ডাকাতেরা। তারা বাসটি নিয়ে সাভারের চন্দ্রা-আশুলিয়া পর্যন্ত যায়। পরে রাতভর কয়েকবার টাঙ্গাইল পর্যন্ত চক্কর দেয়। এ সময় দুজন নারী যাত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয়। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে টাঙ্গাইল শহর বাইপাস সড়কের শিবপুর এলাকায় বাসটি রেখে ডাকাত দল পালিয়ে যায়। ৯৯৯ এ খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল যায় এবং বাসটি জব্দ করে। পরে বাসের যাত্রীদের নিয়ে সকালে টাঙ্গাইল সদর থানায় যান চালক। যাত্রী ও বাসের স্টাফদের থেকে ডাকাতেরা ১০টি মুঠোফোন, ১১ আনা সোনা, ১ ভরি রুপাসহ মোট ২ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকার মালামাল লুণ্ঠন করে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এক যাত্রী বলেন, ‘ডাকাতদের মধ্যে একজন ড্রাইভার ছিল। সে বাস চালায়। বাকি ডাকাত আমাদের হাত, পা, চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে। তারপর সবার কাছ থেকে সব কিছু লুট করে। এক নারী যাত্রী বলেন, ‘ডাকাতরা আমাদের নাক, কান ও গলার গয়না ছিনিয়ে নেয়।’
অপর যাত্রী জুয়েল মিয়া জানান, তাঁর চোখ-মুখ বাঁধা ছিল। তিনি নারী যাত্রীদের কান্নাকাটি ও কাকুতি-মিনতি শুনতে পান। টাকা-গয়না ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য নারী যাত্রীদের তল্লাশির সময় শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে বলে তিনি জানান।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এইচ এম মাহবুব রেজওয়ান সিদ্দিকী বলেন, ‘এ ঘটনায় বাসের মিনু মিয়া বাদি হয়ে অজ্ঞাত ৮ থেকে ৯ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় শ্লীলতাহানী কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ডিবি ও সদর থানা পুলিশসহ একাধিক টিম ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।’
এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলে মহাসড়কে ‘ইউনিক রয়েলস’ নামের বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনায় করা মামলায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তাঁদের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁরা সবাই কারাগারে আছেন। মামলাটি তদন্ত করছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
২০২৩ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকা থেকে জামালপুরগামী একটি বাসে একই কায়দায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক মো. আহসানুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তার সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। মামলাটির এখনো অভিযোগ গঠন হয়নি। আসামিরা সবাই জামিনে আছেন।
২০২২ সালের ২ আগস্ট কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী একটি বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। মামলাটি টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। মামলার ১২ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন হয়েছে। কিন্তু বাদী ও সাক্ষীরা আদালতে না আসায় কয়েকবার সাক্ষ্য গ্রহণ পিছিয়েছে।