বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রাজধানীর মিরপুরে মাহফুজ আলম শ্রাবণ হত্যার অভিযোগে অভিনেতা ইরেশ যাকেরসহ ৪০৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ২০ এপ্রিল নিহতের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পী ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন। ওইদিন আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করে অভিযোগটি মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে নিয়মিত মামলা হিসেবে নেওয়ার নির্দেশ দেন। রবিবার (২৭ এপ্রিল) আদলত সূত্রে এ খবর জানা যায়।
এদিকে, অভিনেতা ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে মামলার খবর প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন অনুরাগী এবং শোবিজ তারকা ও পরিচালকরা। অনেকেই দাবি তুলেছেন অভিনেতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সম্মুখ যোদ্ধা ছিলেন। এর পরও অভিনেতার বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা।
এ মামলার খবর প্রকাশ্যে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক তারকাকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
জনপ্রিয় পরিচালক শিহাব শাহীন লিখেছেন, ‘ইরেশ যাকের জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। আর তার বিরুদ্ধে কিনা জুলাই হত্যা মামলা!’
পরিচালক শিহাব শাহীনের পোস্টের মন্তব্যের ঘরে জনপ্রিয় অভিনেতা টুটুল চৌধুরী লিখেছেন, ‘যারা মেধাবী তারা আওয়ামী সরকারের সকল সুবিধা গ্রহণ করেছে। যারা মেধাবীতর তারা আওয়ামী সরকারের সকল সুবিধা গ্রহণ করে সরকারের পতনের গন্ধ পেয়ে দ্রুত বিপ্লবী হয়ে গেছে। যারা মেধাবীতম তারা আওয়ামী সরকারের আমলে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছে।
পরিচালক আশফাক নিপুণ গণমাধ্যমের একটা কার্ড শেয়ার করে লিখেছেন, ‘অগাষ্ট মাসের ১ তারিখ ফার্মগেটে আমার সাথে, আমাদের অনেকের সাথে পুরোটা সময় ইরেশ যাকের এবং তাঁর স্ত্রী দাঁড়িয়েছিলেন 'জুলাই হত্যাকাণ্ডের' প্রতিবাদে। উনার এবং আমাদের অনেক সহকর্মী একই সময় বিটিভি ভবনে শোক প্রকাশ করতে গেলেও উনি সেখানে যান নাই। উনার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে, হোক কিন্তু উনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নিতান্তই হাস্যকর। এরকম গায়েবী মামলায় আসামী করতে গিয়ে জুলাই হত্যাকাণ্ডের সত্যিকার আসামীদের পরিত্রাণের পথ যে সুগম করে দেয়ার পায়তাঁরা হচ্ছে।
জনপ্রিয় রেডিও জকি ও ইউটিউবার মো. গোলাম কিবরিয়া সরকার (আরজে কিবরিয়া) সোশ্যাল মিডিয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘ইরেশ যাকের কে হত্যা মামলার আসামী! মানে এই লিস্ট গুলা বানায় কারা? এরা কি আসলেই চায় জুলাই অপরাধীদের বিচার হোক? কাজে কর্মে তো মনে হয় না।’
অভিনেত্রী বাঁধনও এক দীর্ঘ পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। যার একটি অংশে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘অভিনেতার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘আজ ইরেশকে হেনস্তার শিকার হতে দেখে হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। আমরা আগেও দেখেছি যারা সাহস করে সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, তাদের কী পরিণতি হয়েছে। তবুও যখন আমরা ভেবেছিলাম একটি ভালো, নিরাপদ দেশ গড়ছি, তখন এই দৃশ্য এখনও গভীরভাবে কষ্টদায়ক ও হতাশাজনক।’
এ হত্যা মামলায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী-এমপি, ঢাকা সিটির সাবেক দুই মেয়র, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, নির্বাচন কমিশনার ও আইনজীবীসহ ৪০৮ জনের নামোল্লেখ করা হয়। এ মামলায় অভিনেতা ইরেশ যাকের ১৫৭ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি।