সোনিয়া ফাউন্ডেশনের সোনিয়া’র বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী পরিবারদের সংবাদ সম্মেলন

অপরাধ টাঙ্গাইল সদর মিডিয়া মির্জাপুর

নিজস্ব প্রতিবেদক: সোনিয়া ফাউন্ডেশন-এর সোনিয়া আক্তার অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর কথা বলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করার বিরুদ্ধে এবং পাওনা টাকা চাইতে গেলে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে ধষর্ণ-চাদাঁবাজির মামলা দিয়ে হয়রানী করার প্রতিবাদে ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগীদের এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

১৮ মার্চ, মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সোনিয়া আক্তার (৩২), পিতা- বাচ্চু মিয়া, গ্রাম- জামুর্কী, উপজেলা- মির্জাপুর এর বিরুদ্ধে এ সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগীরা।

 

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগী সাজুর বড়ভাই মোঃ সুমন। তিনি বলেন, আজ থেকে প্রায় ৫ বছর পূর্বে ‘সোনিয়া ফাউন্ডেশন’ এর সোনিয়ার সাথে আমার ভাই মোঃ শাহরিয়ার হোসেন সাজুর পরিচয় হয়। এক পর্যায় আমার ভাইকে তিনি ভাই বানিয়ে আমাদের বাড়ীতে কয়েক দফা যাতায়াত করে আমার বাবাকে বাবা ডেকে বলেন- আপনার ছেলেকে আমি ভাই বানিয়েছি, আমি ওকে অষ্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দেই।

আমার বাবা ও ছোট ভাইসহ আমরা তার কথায় বিশ্বাস করে এবং ছোট ভাইয়ের পিড়াপিড়িতে রাজি হয়ে যাই। আর তেমন কোন যাচাই-বাছাই না করে কয়েক দফায় ১৭ লক্ষ ২০ হাজার ১ শত পনের টাকা আমার দেই। টাকা নেওয়ার পর আজ না কাল এভাবে চলে যায় বছর দেড়েক। এরই মধ্যে ভূয়া কিছু কাগজপত্র আমাদের দিয়ে বলেন, এইতো হয়ে যাবে আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করেন। এভাবে যখন আরো কয়েক বছর কেটে গেলো তখন আর বুঝতে বাকী রইল না যে আমরা প্রতারণায় পরে গেছি।

আমরা সোনিয়ার হাত থেকে উদ্ধার হওয়ার জন্য সোনিয়াকে বলি আমাদের টাকাগুলো ফেরত দেন। কিন্তু সোনিয়া ফেরত না দিয়ে তালবাহানা করতে থাকে। কোন কুল কিনারা না পেয়ে আমরা আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। যার নাম্বার- ১৩৪৪/২০২৪, মোকাম বিজ্ঞ জুডিঃ ম্যাজিঃ সদর থানা আমলী আদালত, টাঙ্গাইল। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন এবং পিবিআই তদন্ত করে ঘটনা সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

আমার মামলা করছি এই সংবাদ সোনিয়া শুনে তাৎক্ষণিক আমাদের বিরুদ্ধে মোকাম বিজ্ঞ জুডিঃ ম্যাজিঃ সদর থানা আমলী আদালত, টাঙ্গাইল বরাবর ২০ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজির একটি মামলা দায়ের করে যার নং – ১৪৩৭/২০২৪, এই মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে কোন সতত্য না পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিলে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। আমাদের দায়েরকৃত মামলাটিতে মাহামান্য আদালত সোনিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। যাহার স্মারক নং ৫৭৪ তারিখ ২৯/১/২০২৫ মির্জাপুর থানা।

আমার ছোট ভাইকে সোনিয়ার ভাগ্নী জান্নাত আক্তারকে দিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা ও অপহরণ একটি মামলা দেলদুয়ার থানায় করেন। তাৎক্ষণিক দেলদুয়ার থানা পুলিশ আমার ছোট ভাইকে ১৪ মার্চ শেষ রাতে সেহেরী খাওয়ার সময় গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। আমরা সকালে দেলদুয়ার থানায় গেলে ওসি সাহেব মামলা সমন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন ধর্ষণের চেষ্টা ও অপহরণ করার অপরাধে জান্নাত আক্তার নামের এক মেয়ে অভিযোগ দেওয়ায় আমরা গ্রেফতার করছি। আমরা পুরো ঘটনাটি পুলিশকে বললে পুলিশ বুঝতে পারলেও আমার ছোট ভাইকে ছেড়ে না দিয়ে আদালতে প্রেরণ করেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, সোনিয়া আমার ভাইয়ের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে, শুধু আমার ভাইকেই নয় আরো ১৫/২০ মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিয়ে আজ অবলীলায় সকলের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো আজকে রাস্তায় বসে পড়ছে, কেউ রিক্সা চালায় কেউ গরু পালছে, কেউ খেতে খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। আমাদের কাছে অসংখ্য পরিবার জানিয়েছে এই সোনিয়া একটি মাফিয়া চক্রের সদস্য, ইন্টারন্যাশনাল হ্যাকাট টিমের সদস্য, অসহায় পরিবারগুলোকে নিয়ে যখন সাংবাদিকরা লেখালেখি করছে সোনিয়ার বিরুদ্ধে তখন হ্যাকারদের দিয়ে এই সোনিয়া সকল ভিডিও নিউজ সরিয়ে দিচ্ছে। মাফিয়া চক্রের সদস্য সোনিয়াকে নিয়ে যদি আপনারা তৎপর না হন তাহলে আমাদের মত অসংখ্য মানুষ আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সংবাদ সম্মলনে ভুক্তভোগী পরিবারে আরো কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তার মধ্যে করটিয়ার নামদার কুমুল্লী গ্রামের রোজিনা আক্তার এবং করটিয়ার রুবেল আক্তার বাবু তাদের কাছ থেকেও ১৯ লক্ষ টাকাসহ ব্যাংক চেকের সাদা পাতা চুরি করে নিয়ে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা হুমকিসহ নানা ধরনের কথাবার্তা বলে বেড়াচ্ছে। এই সোনিয়া আরো অনেক মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা অষ্ট্রেলিয়া পাঠানোর কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছে। এখনই যদি সোনিয়াকে গ্রেফতার করা না হয় তাহলে এ সমাজে আরো নিরীহ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

সংবাদ সম্মেলনে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী জাকেরুল মওলা, সহসভাপতি নাসির উদ্দিনসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিক ও ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *