দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে উঠতে গিয়েও চেয়ারে বসেই থাকলেন রোহিত শর্মা। কিছু একটা বলার বা জানানোর যে তখনো বাকি! মৃদু হাসিতে সদ্য আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ী অধিনায়ক সেটি জানাতেই পুরো সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ছুটলো হাসির ফোয়ারা, ‘আরেকটা কথা বলে রাখি।
আমি কিন্তু ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি না। নিশ্চিত করতে চাই এটি নিয়ে আর কোনো গুজব যেন না ছড়ায়। আমি আছি।’ এরপর উঠলেও সহসাই জায়গাটা ছেড়ে গেলেন না নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৩ বলে ৭৬ রানের ইনিংসে ফাইনালের ভাগ্য গড়ে দেওয়া ব্যাটার। বরং থাকলেন আরো কিছুক্ষণ। উপস্থিত সাংবাদিকরা বিশেষ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা চাইলেন ভারত অধিনায়কের সঙ্গে ফ্রেমবন্দী হতেও।
১০ মাসের মধ্যে দুটো আইসিসির প্রতিযোগিতার ট্রফি উঁচিয়ে ধরা রোহিত আবদার মেটাতে সঙ্গে সঙ্গেই তৈরি হয়ে গেলেন। টেবিলের ওপর রাখা ট্রফিটা হাতে তুলে নিয়ে ছবির জন্য যখন পোজ দিতে দাঁড়িয়েছেন, ততক্ষণে তাঁর পেছনে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন সাংবাদিকরা। ঠিক হলো সেলফি তোলা হবে। আইসিসির মিডিয়া বিভাগের এক কর্মী নিজের মোবাইলে তা তোলার পরও যেন যথেষ্ট বলে মনে হল না কারো কারো। ডায়াসের ওপরে দাঁড়ানো রোহিত আর নীচে তাঁর পেছনে থাকা ভারতীয় সাংবাদিকদের কয়েকজনের সেলফি তোলার চেষ্টাও চলতে থাকে। তাঁদেরই একজনের মোবাইল নিয়ে এবার ভারত অধিনায়ক নিজেও তুলতে শুরু করে দিলেন সেলফি। ট্রফি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ঢোকার সময়ও ভারত অধিনায়ককে করতালিতে স্বাগত জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। গত বছর জুনে বার্বাডোজে টি-টোয়েন্টির বিশ্ব জয়ী অধিনায়কের শোভা তখন আরো বাড়িয়ে চলেছে আরেকটি ট্রফি।
প্রশ্ন উঠলো যে এই দুটো ট্রফিই তাঁর কাছে সমান মূল্যবান কিনা? নাকি ২০২৩ সালে দেশের মাটিতে না জেতা ওয়ানডে বিশ্বকাপই বেশি অমূল্য হয়ে আছে এখনো? এবার রোহিত পাশে রাখা ট্রফিটা দেখিয়ে বললেন, ‘এটিও তো কম নয়। অবশ্য কথায় কথায় জিততে না পারা ওয়ানডে বিশ্বকাপও যেন রোহিতের কণ্ঠে বেদনার সুর বাজিয়ে গেল অনেকটা, ‘ওয়ানডে বিশ্বকাপ ওয়ানডে বিশ্বকাপই।
সেই ছোটবেলা থেকে আমার ৫০ ওভারের বিশ্বকাপই দেখে আসছি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই বলুন কিংবা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ বা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি - তখন এসবের কিছুই ছিল না।’ তাই বলে কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপ এবং চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়কেও গৌরবের মাপকাঠিতে কোনো অংশে পিছিয়ে রাখতে চাইলেন না ফাইনালের ম্যাচ সেরা ভারত অধিনায়ক, ‘দেখুন, ট্রফি তো ট্রফিই। আপনি যে কোনো ফাইনালেই জিতুন না কেন, সেটি আপনাকে দারুণ গৌরবের অনুভূতিই দেবে। আপনাকেই শুধু নয়, দেবে পুরো দলকেই। আমি নিশ্চিত যে গোটা জাতিই দারুণ খুশী। কারণ একটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল জেতা অনেক বড় অর্জন।’
গত রাতে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ভারত আরেকটি অর্জনের চূড়ায় গিয়ে বসার ছন্দটা ধরেছে রোহিতের ব্যাটে চড়েই। এমন ম্যাচ ভাগ্য গড়ে দেওয়া ইনিংস খেলা কারো সঙ্গে তাঁর ওয়ানডে থেকে অবসরের আলোচনা যায় না। তবু কেউ একজন পরপর দুটো ট্রফি জেতা রোহিতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে বললেন, ‘কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই। যেভাবে এখন চলছে, সেভাবেই চলতে থাকবে।’\ পরে তো প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে উঠতে গিয়েও বসে জানালেন যে তিনি আছেন এবং থাকবেন।