নারী দিবস: বাংলাদেশের শোবিজের নারীরা যা ভাবছেন

নারী দিবস: বাংলাদেশের শোবিজের নারীরা যা ভাবছেন

বিনোদন

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীদের অধিকার ও মর্যাদার উদযাপনে শতাধিক বছর ধরে দিনটি পালিত হয়ে আসছে। বিশেষ এই দিনে কেমন আছেন শোবিজের নারীরা? বেশ কয়েকজন অভিনেত্রী ও গায়িকার সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছেন কামরুল ইসলাম।

কেমন আছেন? প্রশ্নটা সহজ এবং চেনা। রোজই এ প্রশ্নের মুখোমুখি হয় মানুষ। দুবার না ভেবে অধিকাংশ মানুষই জবাব দেন, ‘ভালো আছি’। তবে প্রশ্নটা যখন দ্বিতীয়বার করা হয়, তখন কিছুটা নীরবতা নেমে আসে কণ্ঠস্বরে। ভাবতে হয়, ভেবে তবেই বলতে হয়।

এই যেমন শোবিজের যে কয়জন নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো, প্রত্যেকেই পরিচয়ের সূত্রে শুরুতে ‘ভালো আছি’ই বললেন। কিন্তু দ্বিতীয় উত্তরে বদলে গেছে ভাষা, বদলে গেছে প্রেক্ষাপট। কারণ সার্বিক পরিস্থিতি।
সোমনূর মনির কোনাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় এক শিক্ষার্থীকে হেনস্তা কিংবা মাগুরায় নিজের বোনের বাড়িতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশু; এই সব ঘটনা সাধারণ মনে যেমন আতঙ্ক তৈরি করছে, তেমনি শঙ্কিত হচ্ছেন শোবিজের নারীরাও।

তার ওপর গত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন একাধিক অভিনেত্রী। পণ্ড করে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এসব নিয়ে অল্পবিস্তর প্রতিবাদও হয়েছে। তবে এই সব ভেবে যখন ‘কেমন আছি?’র জবাব দিতে হয়, তখন উত্তর আলাদাই হয়।

কাজী নওশাবা আহমেদ

অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ জবাব দিলেন এভাবে, ‘ভীষণ শঙ্কায় আছি।

আমি তো ব্যক্তি জীবনে কারো মা, বোন, সন্তান। সে দিক থেকে একজন মানুষ হিসেবে খুব ব্যথিত এবং শঙ্কিত। মাগুরায় যে ঘটনা (শিশু ধর্ষণ) ঘটল, ঝিনাইদহে মাদ্রাসার এক ছাত্র কমলা খাওয়ায় যে প্রহারের শিকার হলো; এই সব শুনে বা দেখে ভালো থাকার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। আমার মেয়েটা ভালো আছে, এখন রমজান চলছে, সামনে ঈদ, এই সব ভেবে হয়তো ভালো আছি। কিন্তু আশপাশের পরিস্থিতি দেখে ভালো থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
বিভিন্ন আয়োজনে অভিনেত্রীদের প্রতিবন্ধকতায় পড়ার বিষয়ে নওশাবা ভারসাম্য রেখে বললেন, ‘এটা মোটেও ভালো ঘটনা না। আমরা তো সংস্কৃতির ধারক। আমাদের সঙ্গে এ রকম হওয়া তো উচিত নয়। এই যে মন্দ দিকের কথা বলছি, সেই সঙ্গে ভালোটাও বলতে হবে। যেমন আমরা রংপুরে পথনাটকের উৎসব করে এলাম। উপচেপড়া ভিড় ছিল মানুষের। হাউসফুল শো। সেটার কথাও তো সামনে আসা দরকার। এটা ঠিক যে চারপাশের নানা ঘটনায় আমরা ট্রমাটাইজড হয়ে আছি। তার মানে কিন্তু এই নয় যে দর্শক আসছেন না। দর্শক তৈরি করাও তো আমাদেরই দায়িত্ব। আমি মনে করি বাঙালি সাহসী জাতি, কখনো দমে যায়নি। নারীরা, সংস্কৃতিকর্মীরা কখনো দমে যায়নি, যাবে না।’

সোমনুর মনির কোনাল

সংগীতশিল্পী সোমনুর মনির কোনালের কাছেও একই প্রশ্ন। তিনি শুধু এটুকুই বললেন, ‘নারী দিবস নিয়ে কিছু বলতে আমার লজ্জা হচ্ছে। কী বলব? এই ছোট্ট একটা শিশু ধর্ষিত হলো নিজের বোনের বাড়িতে গিয়ে। একজন মানুষ হিসেবেও কিছু বলার মুখ আছে আমাদের?’

মাসুমা রহমান নাবিলা

অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলার সঙ্গেও কথার শুরুটা হলো ঠিকঠাক। স্বাভাবিক নিয়মে জানালেন, ভালো আছেন। তবে নারী দিবস প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, ‘একটু ব্যস্ততার মধ্যে আছি। পাঁচ মিনিট পর কল করছি।’ পরে আর ‘আয়নাবাজি’ অভিনেত্রীর সাড়া মেলেনি।

ফাতিমা তুয-যাহরা

সংগীতশিল্পী ফাতিমা তুয-যাহরা ঐশী বলেন, ‘আমি ভালো আছি। নারী হিসেবে বলব না, মানুষ হিসেবে ভালো আছি। সৃষ্টিকর্তা নারী-পুরুষ আলাদা করে বানিয়েছেন বটে, তবে আমরা বেঁচে থাকি তো মানুষ হিসেবে। আর কিছু ঘটনার কথা তো কানে আসছে। সেটা নিয়ে বলব, আমরা সবাই চাই সুন্দরভাবে নিজেদের কাজ করে যেতে। দেখুন, দেশ ভালো থাকে কখন? যখন প্রত্যেকে যার যার কাজ সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে করতে পারেন। সুতরাং যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে, সেগুলো আর না ঘটুক, এটাই প্রত্যাশা আমার।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন আন্দোলনে অতীতে যারা সরব ভূমিকায় ছিলেন, তাঁদের অনেককেই কল দেওয়া হয়েছিল। দেশের বাইরে বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন, তেমনই এক জনপ্রিয় অভিনেত্রী জানান, এ প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে আগ্রহী নন তিনি। এ ছাড়া শোবিজের আরো একাধিক অভিনেত্রী ও গায়িকার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে প্রত্যেকেই বলেছেন, নারী দিবস নিয়ে কথা বলতে চান না তাঁরা। ঠিক কোন কারণে তাঁরা নীরবতা বেছে নিয়েছেন, সেটাও স্পষ্ট করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *