নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস বাসে ডাকাতি ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করার পর ডাকাত দলের সকল সদস্যরা ‘মাদকাসক্ত’ বলে দাবি করেছে পুলিশ। বাস থেকে লুট করা একটি মোবাইল সেটের বিনিময়ে গাঁজা কেনার সূত্র ধরেই তাদের সন্ধান পাওয়া যায় বলেও পুলিশ জানায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. আহসানুজ্জামান বলেন, শুক্রবার বিকালে তিনজনকে সাভারের গেন্ডার একটি অটোমোবাইল গ্যারেজে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে দু'জন নেশায় এতটাই বুঁদ হয়েছিল যে হাতকড়া পরানোর পরও তারা বুঝতে পারেনি।
এর আগে সোমবার রাতে ইউনিক রোড রয়েলসের বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে ৩০/৩৫ জন যাত্রী নিয়ে বাসটি রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে যাত্রীবেশী ৮-৯ জন ডাকাত অস্ত্রের মুখে বাসটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। প্রায় তিনঘণ্টা ধরে বাসটিকে বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে যাত্রীদের টাকা-পয়সা, মালামাল লুটসহ তারা দু'জন নারী যাত্রীকে যৌন নিপীড়নও করে।
ঘটনার তিনদিন পর বৃহস্পতিবার রাতে মির্জাপুর থানায় ওমর আলী নামে এক যাত্রী বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলার পর টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও মির্জাপুর থানা পুলিশের সমন্বয়ে একটি বিশেষ টিম গঠন করে দেন। ওই দিনই টিমের সদস্যরা ডাকাতদের সন্ধানে মাঠে নামে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আহসানুজ্জামান বলেন, তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ডাকাত দলের সদস্যরা সাভার আশুলিয়া এলাকার বলে জানতে পারেন। তখন তিনি তার একজন তথ্যদাতার (সোর্স) মাধ্যমে জানতে পারেন ওই এলাকার নেশাখোর কিছু যুবক বাস ডাকাতিসহ নিয়মিত চুরি, ছিনতাই করে থাকে। তারা সাভার এলাকার একজন মাদক কারবারির কাছ থেকে নিয়মিত গাঁজা, হেরোইন ক্রয় করে।
সেই তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার বিকালে সাভারের চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে ২২-২৩ বছর বয়সী ওই মাদক কারবারিকে আটক করা হয়। মাদক কারবারি পুলিশকে জানায়, একটি মুঠোফোন সেটের বিনিময়ে তার কাছ থেকে শহিদুল, সবুজ ও শরীফুজ্জামানসহ কয়েকজন গাঁজা নিয়ে গেছে। তখন ওই মাদক কারবারিকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ শহিদুলদের সন্ধানে বের হয়ে সাভারের গেন্ডা এলাকায় যায়।
এসআই আহসানুজ্জামান বলেন, বিকাল ৫টার দিকে সেখানে অটোমোবাইল গ্যারেজে থাকা একটি বাসে ঘুমাচ্ছিল মো. সবুজ ও শরীফুজ্জামান। গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা বাসটিতে ঢুকেই তাদের হাতকড়া পড়িয়ে ফেলেন। কিন্তু তারা নেশায় এতটাই বুঁদ হয়েছিল যে হাতকড়া পড়ানোর পরও বুঝতে পারেনি। পরে পুলিশ তাদের ডেকে তুলে।
এদিকে পুলিশ যখন বাসে দুইজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করছিল সেসময় বাসটির কাছে আসে ডাকাত দলের অপর সদস্য শহিদুল ইসলাম। তখন তাকেও আটক করা হয়।
এই গ্রেপ্তাররা হলেন- মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার লাউতারা গ্রামের বদর উদ্দিন শেখের ছেলে শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল মুহিত (২৯), শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ইসমাইল মোল্লার ছেলে মো. সবুজ (৩০) ও ঢাকার সাভারের টান গেন্ডা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে শরীফুজ্জামান ওরফে শরীফ (২৮)।
এদের মধ্যে শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল মুহিতের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানায় একটি ও ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানায় একটি বাস ডাকাতি মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মো. সবুজ ও শরীফুজ্জামান শরীফ টাঙ্গাইলের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, নেশার টাকার জন্যই তারা ডাকাতি, ছিনতাই করে থাকে। এসব কর্ম করে যে টাকা পায় তা দিয়েই নেশা করে। টাকা শেষ হয়ে গেলে আবার ডাকাতি, ছিনতাই শুরু করে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আহসানুজ্জামান বলেন, বাস ডাকাতির সময় নারী যাত্রীদের ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবে নারী যাত্রীরা শ্লীলতাহানীর শিকার হয়েছেন। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য যাদের শনাক্ত করা গেছে তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে মামলার বাদী বাসের যাত্রী ওমর আলী শনিবার টাঙ্গাইল গোয়েন্দা কার্যালয়ে গিয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের শনাক্ত করে জানান, গ্রেপ্তারকৃত তিনজনই ডাকাতিতে অংশ নিয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে যে টাকা উদ্ধার করা হয়েছে, তা তার (ওমর আলীর) কাছ থেকেই ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) ওসি মীর মোশারফ হোসেন জানান, ডাকাতির সঙ্গে বাসটির চালক ও তার সহকারীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।