নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামিকাল ২ ফেব্রুয়ারি, রবিবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে টাঙ্গাইলের বহুল আলোচিত জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার রায় হবে। গত ২৬ জানুয়ারি, রবিবার এ মামলায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সব যুক্তিতর্ক শেষ করে বিচারক মো. মাহমুদুল হাসান রায়ের দিন ধার্য করেন। এ রায়ে জেলায় আওয়ামী রাজনীতির গতিপথ অনেকটা নির্ধারিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ইতোমধ্যে এ নিয়ে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা সমালোচনা ও সমীকরণ চলছে।
বহুল আলোচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় আলোচিত খান পরিবারের সাবেক এমপিসহ চারভাই আসামি রয়েছেন। তাদের সাজা না হলে আবার দলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। আর তাদের সাজা হলে আওয়ামী রাজনীতির গতিপথ অনেকটা বদলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, বিগত ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদের লাশ নিজ বাসার পাশে শহরের কলেজ পাড়া থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর ফারুক আহমদের স্ত্রী নাহার আহমদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পায়।
ডিবি পুলিশ সন্দেহভাজন আনিসুল এবং মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। আদালতে দুজনের চাঞ্চল্যকর জবানবন্দিতে খান পরিবারের চার ভাইয়ের নাম উঠে আসে। ওই মামলার ১৪জন আসামির মধ্যে খান পরিবারের বড় ছেলে আমানুর রহমান খান রানা, তার ছোটভাই সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জাহিদুর রহমান কাকন ও অপর ছোটভাই সানিয়াত খান বাপ্পা আসামি হন।
তাদের মধ্যে বড়ভাই আমানুর রহমান খান রানা ২০১২ সালে ঘাটাইল-৩ আসনের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার ছোটভাই সহিদুর রহমান খান মুক্তি ২০১১ সালে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। অপর ছোটভাই জাহিদুর রহমান খান কাকন ছিলেন ব্যবসায়ী নেতা। সর্বশেষ ছোটভাই সানিয়াত খান বাপ্পা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
এ প্রসঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকাদ্দেস বলেন, খান পরিবারের সন্তানদের মামলায় সাজা হলে তাদের রাজনীতিতে আর কোন প্রভাব থাকবে না। তাদের প্রভাব না থাকলে টাঙ্গাইলে আওয়ামী রাজনীতি ডালপালা মেলতে পারবে না।
জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ফারুক হত্যা মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইলে আগামি দিনের আওয়ামী লীগের রাজনীতি অনেকটা নির্ভর করছে। তারা জানান, আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী আত্মগোপনে রয়েছে। মামলায় সাজা না হলে খান পরিবারের সন্তানরা জেলা আওয়ামী লীগের হাল ধরতে পারবেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত সরকারি কৌশলী মো. সাইদুর রহমান জানান, যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে ২৭ জন সাক্ষীর জবানবন্দী, জেরা ও কয়েকজন আসামিসহ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা করে আদালতকে শোনানো হয়েছে।
এ বিষয়ে নিহত ফারুক আহমদের একমাত্র ছেলে মজিদ আহমদ সুমন বলেন, মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আসামিরা আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে পড়েছে। তারা যে কোন মূল্যে এ মামলা থেকে খালাস পেতে চায়। তিনি আরও বলেন, এ মামলায় আদালতে অভিযোগ গঠন, সাক্ষী গ্রহণের পর্যায়ে আসামিরা বিচার প্রক্রিয়ায় নানাভাবে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আইন সঠিক পথে চললে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে বলে তিনি আশা করেন।