নাগরপুর প্রতিনিধি: নাগরপুর উপজেলায় প্রথম সমতল ভূমিতে পানের চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন জহিরুল ইসলাম। তিনি নাগরপুর উপজেলার মামুদনগর ইউনিয়নের ভাতশালা গ্রামে উঁচু বাড়ির উঠানে পরীক্ষামূলক পানের 'বরজ' করে সফল হয়েছেন।
জানা যায়, জহিরুল ইসলাম (৩৫) নাগরপুর উপজেলার মামুদনগর ইউনিয়নের ভাতশালা গ্রামের মৃত সরব আলীর ছেলে। জহিরুল অন্যের দোকানে দর্জির কাজ করে অভাব-অনটনে সংসার চালাতো। এক বন্ধুর সঙ্গে পরামর্শ করে রাজশাহী থেকে মিষ্টি জাতের প্রায় ৫ হাজার পানের চারা এনে বাড়ির পরিত্যক্ত পতিত জমিতে তা রোপণ করেন। পান চাষ করেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি ও তার পরিবার। এখন শখের বসে গড়ে তোলা পানের বরজের পরিচর্যা করে দিন কেটে যায় তার। বরজের পান বিক্রি করেই স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে চলছে জহিরুলের সংসার।
পান চাষি জহিরুল ইসলাম জানান, নাগরপুর উপজেলায় তিনিই প্রথম পান চাষ শুরু করেন। রাজশাহী থেকে পানের ডগা এনে প্রায় ২৫ শতাংশ ভিটে বাড়ির পতিত জমিতে রোপণ করেন। চারদিকে পাট খড়ির বেড়া ও উপরে ছাউনি দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়। এতে তার খরচ হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। কোন রকম সমস্যা দেখা দিলে রাজশাহী থেকে অভিজ্ঞ দুই-একজন পান চাষি এনে তাদের পরামর্শ নেন। ৯ মাস পর থেকে পান তোলা শুরু করেন তিনি। স্থানীয় বাজার ছাড়াও রাজশাহীতে পান বিক্রি করতে নিয়ে জান জহিরুল। তবে পান চাষের জন্য জমি উপযোগী কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিল তার। সেই সংশয় কাটিয়ে এখন সফলতার মুখ দেখছেন। কয়েক মাসেই পুরো খরচের টাকা উঠে আসে তার। এখন সে একজন সফল পান চাষি।
তিনি বলেন, ২৫ শতাংশ জমিতে পান চাষ করে ২ লাখ টাকা খরচ করে বর্তমানে প্রতিসপ্তাহে প্রায় ৩ হাজার টাকার পান বিক্রি করছেন। এর মধ্যে প্রায় ৬৭ হাজার টাকার পান বিক্রি হয়েছে। পান চাষের নিয়ম অনুযায়ী বর্তমানে পানগাছের লতা বাড়তি হলে আবার সে লতাগুলো মাটিতে ঢেকে দিতে হয় এখন সেই প্রস্ততি চলছে। সব ঠিকঠাক থাকলে এ বাগান থেকে প্রতিবছর দেড় লাখ টাকার পান বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।
কৃষক জহিরুলের অভিযোগ, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সে কোন প্রকার পরামর্শ বা সহযোগিতা পায়নি। পান চাষের জন্য তিনি রাজশাহীর পানচাষীদের সহযোগিতায় সফল হয়েছেন। যদি সরকারের পক্ষ থেকে পান চাষের জন্য কৃষি উপকরণ, কৃষি সহায়তা ঔষধ, সার, কীটনাশক ও পরামর্শ পেত তবে তার দেখাদেখি অনেক কৃষক তাদের জমিতে পান চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারতো।
পানচাষ পদ্ধতি নিয়ে তিনি আরো জানান, পান চাষের উপযুক্ত সময় বাংলা বৈশাখ মাস। তাই বৈশাখের শুরুতেই উঁচু জমিতে সারিবদ্ধভাবে পানের চারা রোপন করা হয়। জমি থেকে পানি সহজেই বের হওয়ার জন্য করা হয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা। প্রখর রোদের তাপ থেকে চারা বাঁচাতে বাঁশ ও খড়ের সাহায্যে মাচা দেওয়া হয়। ৬ থেকে ৭ ফুট ওপরে ছাউনি দেওয়া হয়। সপ্তাহে অন্তঃত দুবার কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। পান গাছের প্রধান খাবার খৈল। যা বর্ষাকালে প্রয়োগ করা হয়। ফাল্গুন চৈত্রে খৈল প্রয়োগ করতে হয় না।
নাগরপুর উপজেলার ভাতশালা গ্রামের সোলাইমান মাস্টার ও প্রতিবেশী মহসিন মোল্লা বলেন, আমাদের এলাকায় পান চাষ হবে এটা আমরা বিশ্বাসই করতে পারিনি। জহিরুলের সফলতা দেখে আমরা এলাকাবাসি খুবই খুশি। জহিরুলকে দেখে এখন জেলার আরও অনেকে পান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে মনে করছি।
নাগরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান হোসাইন শাকিল বলেন, নাগরপুর উপজেলায় পান চাষে জহিরুল ইসলাম একজন সফল উদ্যোক্তা। পান চাষে জহিরুল ইসলামকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সকল ধরনের কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। পান যেহেতু অর্থকরী ফসল তাই কৃষি অফিস থেকে জহিরুল ইসলামসহ যারা পান চাষে এগিয়ে আসবে তাদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদানে সচেষ্ট থাকবো।