নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়ার পর ট্রেনিংয়ের কথা বলে ডেকে নিয়ে তিনজনকে হত্যাকারী আসামি কনক রহমানকে গ্রেফতার করেছে।
বুধবার, ১৭ জুলাই রাত ৮টার দিকে টাঙ্গাইল পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার গোলাম সবুর।
পুলিশ সুপার গোলাম সবুর বলেন, ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামের তালেব আলীর ছেলে কনক রহমান (২৮) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত একজন সৈনিক। চাকরিতে থাকাকালীন বিভিন্নজনের কাছ থেকে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নেন তিনি। সেনাবাহিনীতে ইলেকট্রিশিয়ান ও ফায়ারম্যান পদে চাকরি দেওয়ার জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে আট লাখ টাকা করে মোট ২৪ লাখ টাকা নেন। তাদের চাকরি দিতে না পেরে সেনাবাহিনীর সিল সাক্ষর জাল করে ভুয়া নিয়োগপত্রও প্রদান করেন।
পরবর্তীতে তাদের চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি বিকেল ৪টার দিকে আসামি কনক রহমান তার সহযোগীর সহায়তায় ভুক্তভোগী সামাদ সজিবকে (১৮) টাঙ্গাইল সদরের আটপুকুর পাড়ে তার ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। সেখানে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কনক ও তার সহযোগী মিলে সামাদ সজিবকে গলাটিপে হত্যা করেন। মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে তারা কনকের মোটরসাইকেলের মাঝখানে মরদেহ বসিয়ে মাথায় হেলমেট পরিয়ে বাসাইল উপজেলার পাটখাগুরি গ্রামে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উত্তর পাশে ভুট্টা ক্ষেতের ভেতরে নিয়ে যান। এরপর মোটরসাইকেল থেকে পেট্রোল বের করে মৃত সামাদ সজিবের গায়ে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যান।
ওই সময় বাসাইল থানা পুলিশ বাসাইল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা রুজু করে। যার মামলা নং-২, তারিখ- ০৮/০২/২০১৪ ইং, ধারা-৩০২/২০১/৩৮ পেনাল কোড রুজু হয়। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই সংস্থায় তদন্তাধীন।
একইভাবে চলতি বছরের মার্চ মাসের ২ তারিখে কনক ও তার সহযোগী মিলে ভুক্তভোগী আতিক হাসানকে (১৮) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় কৌশলে মধুপুর উপজেলার পীরগাছা রাবার বাগানের ৬নং ব্লকের ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে তারা অজ্ঞাতনামা এক পাহাড়ি ব্যক্তির বাসায় মদ্যপান করে। অতঃপর রাত ৮টার দিকে আতিককে ওই ব্লকের পশ্চিম পাশে লাল মিয়ার আনারস বাগানের পানি নিষ্কাশনের শুকনা ড্রেনের মধ্যে নিয়ে গলাটিপে হত্যা করেন। মরদেহ গুম করতে একইভাবে আগুন ধরিয়ে দেন ও মরদেহ গাছের ডালপালা ও শুকনো পাতা দিয়ে ঢেকে দেন। পরবর্তীতে মধুপুর থানা পুলিশ অশনাক্তকৃত মরদেহ উদ্ধার করে মধুপুর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা রুজু করে। যার মামলা নং-২, তারিখ-০৩/০৩/২৪ইং, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। মামলাটিও বর্তমানে পিবিআই সংস্থায় তদন্তাধীন রয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ওই ঘটনার পরের দিন মার্চের ৩ তারিখ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কনকের কথা মতো ভিকটিম মো. রাহাত হোসেন উজ্জ্বলকে (১৮) চাকরিতে যোগদানের জন্য তার বাবা টাঙ্গাইল বাইপাস এলাকায় কনকের নিকট বুঝিয়ে দেন। কনক ও তার সহযোগী ভিকটিম রাহাতকে তার টাঙ্গাইল সদরের আট পুকুরপাড় ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। সেখানে রাত সাড়ে ৯টায় আসামি কনক ও তার সহযোগী মিলে রাহাতকে গলাটিপে হত্যা করেন। মরদেহ বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব এলাকার মীর হামজানী থেকে উত্তরবঙ্গগামী মহাসড়কের ১৫নং ব্রিজের প্রায় ২০০ গজ দক্ষিণে ফোরলেন রাস্তার কাজের জন্য রক্ষিত স্তূপকৃত বালির নিচে চাপা দিয়ে রেখে আসেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা রুজু করেন। যার মামলা নং-২, তারিখ- ১২/০৩/২৪ইং, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। এ মামলাটিও বর্তমানে পিবিআই সংস্থায় তদন্তাধীন রয়েছে।
এসব হত্যাকাণ্ডে আসামি কনকের বিরুদ্ধে ঘাটাইল, জামালপুর ও গোপালপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘাটাইল থানা পুলিশের টিমটি মামলাটি তদন্তকালে জানতে পারে, আসামি কনক জামালপুর সদর থানার মামলা সংক্রান্তে গ্রেফতার হয়ে জামালপুর কারাগারে আটক আছেন। আদালতের মাধ্যমে আসামি কনক রহমানকে ঘাটাইল থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানোসহ দুইদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
পরে ১৬ জুলাই ঘাটাইল থানা হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে কনক স্বীকার করেন যে, তিনি ভিকটিম সামাদ সজিব (১৮), আতিক হাসান (১৮) ও মো. রাহাত হোসেন উজ্জলকে (১৮) সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নেওয়া টাকা অনলাইনে জুয়া খেলে নষ্ট করেছেন। তিনি চাকরি দিতে না পেরে তার সহযোগীর সহযোগিতায় তাদেরকে হত্যা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদন্নোতিপ্রাপ্ত) শরফুদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার আলমসহ টাঙ্গাইলের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।