বাসাইল প্রতিনিধি: বাসাইল উপজেলার কাশিল মধ্যপাড়া গ্রামের প্রবাসী সাত্তার মিয়ার বাড়ীর পাশে রাতের বেলা এক নবজাতক শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার, ৩ জুলাই রাত ৩ ঘটিকার দিকে শিশুটিকে বাড়ীর গোসলখানা ও টয়লেটের পাশ থেকে সদ্যভূমিষ্ঠ নবজাতকটি উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, কাশিল গ্রামের সৌদি প্রবাসী সাত্তার মিয়ার বাড়িতে রাত আনুমানিক ৩টার দিকে নবজাতক শিশুটিকে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে সাত্তার মিয়ার স্ত্রী নিলুফা বেগম কান্নার শব্দ পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে।বাড়িটি রাস্তা থেকে অনেক ভেতরে এবং একাধিক বাড়ির ওপর দিয়ে তার বাড়িতে যেতে হয়। ওই বাড়িতে নবজাতকটি কিভাবে এলো। নিলুফা বেগমের ছেলে আকাশ মিয়ার স্ত্রী নার্স হওয়ায় অনেকে ধারণা করছেন- নবজাতকটিকে ওই বাড়িতেই ডেলিভারি করা হয়েছে। বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় রক্ত থাকায় এই সন্দেহটা তাদের আরও বেড়ে গেছে। তবে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানান স্থানীয়রা।
শিশুটিকে উদ্ধারকারী মহিলা নিলুফা বেগম বলেন, 'রাতে প্রাকৃতির ডাকে সাড়ে দিয়ে যখন টিউবওয়েলের কাছে যাই তখন কান্নার শব্দ পাই, এরপর ভয় পেয়ে ঘরের ভিতর ডুকে আমার সন্তান ও ভাগনী এবং কি আমার ছেলের বউকে ডেকে আনি। পরে পাশেই আমার বড় ভাসুরকে ডাক দিলে আসেন। এরপর লাঠি হাতে নিয়ে লাইট নিয়ে সামনে গেলে দেখি পিঁপড়াসহ পোকা মাকড়ে জড়িয়ে রয়েছে। পরে আমি আমার উর্না ছিড়ে নিয়ে শিশুটিকে নিয়ে আসি। এরপর শরীরের পোকা-মাকড় ছাড়িয়ে গোসল করাই। আমি যেহেতু পেয়েছি এখন সরকারের কাছে দাবী করবো যাতে করে আমাকে লালনপালন করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়।'
নিলুফা বেগমের ছেলে আকাশ মিয়া বলেন, আমাকে আমার বউ ডাক দিলে বের হয়ে দেখি সবাই ভয়ে কাঁপছে পরে লাঠি হাতে নিয়ে সামনে লাইট ধরে দেখি একটি শিশু বাচ্চা। পরে আমরা উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি।
লিমা আক্তার নামে একজন বলেন, এই রকম কাজ আমার জীবনে কখন দেখি নাই, যে নিজের সন্তানকে এই রকম বাজে একটা জায়গায় রেখে চলে যায়। এই মহিলা মা নামে অভিশাপ।
স্থানীয় সোনিয়া বেগম নামে একজন বলেন, আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি এই শিশুর কথা শুনে। একজন মা কোন দিন নিজের সন্তান কে ফেল রেখে যেতে পারে না। আমরা জানতে চাই কে এরকম জঘন্য কাজ করছে।
কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রমজান মিয়া বলেন, আমাকে সকালে স্থানীয়রা খবর দেয়, এরকম একটি শিশু পাওয়া গেছে। পরে আমি ঘটনাস্থলে এসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় ফোন দিয়েছি। নবজাতকটি কে বা কারা রেখে গেছে, তা জানা যায়নি। যার বাড়িতে শিশুটি পাওয়া গেছে তিনিই শিশুটিকে লালন-পালন করবেন বলে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। পরে পুলিশ এসে নবজাতকটির চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
বাসাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হানিফ সরকার বলেন, শিশুকে একটি বাড়ির পাশে পাওয়া গেছে। ওই বাড়ির টিউবওয়েল ও টয়লেটের সামনে রক্ত রয়েছে। নবজাতকটির চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তারা এলে শিশুটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরুখ খান বলেন, নবজাতকটিকে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের জেলা কমিটির কাছে পাঠানো হবে। নবজাতকটির চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় নবজাতকটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, আইনগতভাবে বাচ্চাটির ভবিষ্যতের সুরক্ষার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা প্রশাসনিকভাবে নেওয়া হয়েছে, বাচ্চার ভবিষ্যৎ সুন্দর ও ভালো থাকবে, আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।