মির্জাপুর প্রতিনিধি: মির্জাপুর উপজেলা সদরে লৌহজং নদের ওপর কুমুদিনী হাসপাতাল ঘাটের একটি বাঁশের সাঁকো পানির স্রোত আর কচুরিপানার চাপে ভেসে গেছে। বিকল্প পারাপারের ব্যবস্থা না থাকায় হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা রোগী ও মির্জাপুরের দক্ষিণাঞ্চলসহ আশপাশের অন্তত ৩৫ গ্রামের মানুষ তিন দিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। প্রায় তিন কিলোমিটার ঘুরে পোষ্টকামুরী ও পাহাড়পুর এলাকার দুই সেতু দিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে তাঁদের। এতে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, কয়েকদিন ধরে নদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে উজান থেকে আসা কচুরিপানা ওই স্থানে আটকা পড়ে। গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টিতে পানির অতিরিক্ত চাপে সাঁকোটি ভেঙে যায়। সাঁকোটি দিয়ে উপজেলা সদরের সাহাপাড়া, সরিষাদাইড়, আন্ধরা ছাড়াও মির্জাপুরের দক্ষিণাঞ্চলের ভাওড়া, বহুরিয়া, উয়ার্শী ইউনিয়নের অন্তত ৩৫ গ্রামের বাসিন্দারা হালকা যানবাহন ব্যবহার করে চলাচল করেন। এ ছাড়া কুমুদিনী হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং স্কুল ও কলেজ, ভারতেশ্বরী হোমসের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাঁকোটি ব্যবহার করেন। সাঁকোটি দিয়ে অনেকে মোটরসাইকেলে পার্শ্ববর্তী ঢাকার ধামরাই, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়াসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যান। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় পর পারাপারের জন্য কোনো নৌযান নেই। তবে একটি নৌকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
তারা বলেন, নদের ওই ঘাট টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ থেকে প্রতিবছর ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এখনো সেখানে সেতু নির্মাণ হয়নি। ফলে বিকল্প উপায়ে প্রায় তিন কিলোমিটার ঘুরে পূর্ব ও পশ্চিম পাশে পাহাড়পুর ও পোষ্টকামুরী এলাকার দুটি সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
একটি বেসরকারি হাসপাতালের নার্স উমা ঘোষ বলেন, নদের অদূরে সাহাপাড়া এলাকায় তাঁদের বাড়ি। হেঁটে তিনি কর্মস্থল থেকে বাড়ি যেতেন। গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার তাঁর যাতায়াতের জন্য বাড়তি ১২০ টাকা ব্যয় হয়েছে।
তবে সেতু ভাঙায় সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের আয় বেড়ে গেছে। মির্জাপুরের পাকুল্যা এলাকার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক নাদিম হোসেন বলেন, তিনি দিনে এক হাজার টাকা আয় করতেন। বাঁশের সাঁকোটি ভাঙার কারণে তাঁর আয় অনেকটা বেড়েছে। গতকাল সারা দিনে চালকদের অনেকেই চার হাজার টাকার বেশি আয় করেছেন। আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত তাঁর ১ হাজার ২০০ টাকা আয় হয়েছে। এসব যানবাহনের চালকেরা অনেকটা পথ ঘুরে ২০ টাকায় যাত্রীদের নদ পার করে দিচ্ছেন।
জানা যায়, নদীর ওই ঘাট জেলা পরিষদ থেকে প্রতিবছর ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেখানে স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৫৩ বছরেও সেতু নির্মাণ হয়নি। ফলে প্রতিবছর এই মৌসুমে বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। মির্জাপুর পাহাড়পুর গ্রামের বাসিন্দা রফিক মিয়া জানান, প্রতিবছর আমাদের এরকম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
খেয়াঘাটের পাটনি সুভাষ দাস জানান, প্রতিবছর এই মৌসুমে বাঁশের সাঁকো ভেঙে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়। খেয়া নৌকা প্রস্তুত করতেও সময়ের ব্যাপার। আমরা চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খেয়া নৌকাটি চালু করতে।
মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান বলেন, ঘাটটি পৌর এলাকায় অবস্থিত। তাই সেখানে তাঁরা কোনো কাজ করতে পারবেন না। এর দায়িত্ব পৌরসভার।
এ বিষয়ে মির্জাপুর পৌরসভার মেয়র সালমা আক্তার শিমুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ার কথা আমাকে কেউ জানায়নি। খোঁজ নিয়ে জনদুর্ভোগ কমাতে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।