ধনবাড়ী প্রতিনিধি: ধনবাড়ী উপজেলায় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপাকে গণসংবর্ধনা দেবে উপজেলা আওয়ামী লীগ। আজ শনিবার বিকেলের এই গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাককে বাদ দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামকে অতিথি রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় এমপির সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিবাদমান বিরোধ আরো চরম আকার ধারণ করেছে। এদিকে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে ঘিরে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হলেও অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন সাবেক কৃষিমন্ত্রীর অনুসারীরা।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মধুপুরেও শুরু হয় গ্রুপিং।
জানা যায়, সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে মোট পাঁচবার টাঙ্গাইল-১ মধুপুর-ধনবাড়ী আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে খাদ্যমন্ত্রী ও ২০১৮ সালে কৃষিমন্ত্রী ছিলেন। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী শামসুন নাহার চাঁপা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামে ড. আব্দুর রাজ্জাক ও শামসুন নাহার চাঁপার বাড়ি হলেও এবার ড. রাজ্জাকের মন্ত্রীত্ব হারানো এবং চাঁপার মন্ত্রীত্ব লাভে চাঙা হয়ে উঠেছেন রাজ্জাক বিরোধীরা। তারা শামসুন নাহার চাঁপাকে সামনে রেখে এলাকায় রাজ্জাকবিরোধী একটি শক্ত অবস্থান গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। এর অংশ হিসেবে ধনবাড়ী সরকারি কলেজ মাঠে প্রতিমন্ত্রীর সংবর্ধনায় বড়সড় শোডাউনের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করবেন এমপি বিরোধীরা।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, টানা এমপি ও মন্ত্রী থেকে স্থানীয় রাজনীতির একক নিয়ন্ত্রণ ছিল আব্দুর রাজ্জাকের হাতে।
বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু দলীয় মনোনয়ন চান। এ নিয়ে আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। এমপি ও আবু খানের অনুসারীদের মারামারি ও সংঘর্ষও হয়।
মনোনয়ন না পেয়ে পরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবু খান চেয়ারম্যান প্রার্থী হন। এ নির্বাচনে আব্দুর রাজ্জাকের সমর্থন ও সহযোগিতায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়াকুব আলী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে আবু খানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দেন সাবেক এমপি কায়সার চৌধুরী। প্রায় ২ যুগ পর তার এলাকায় প্রবেশ করা নিয়ে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক ধূম্রজাল। এদিকে ধনবাড়ীতে আব্দুর রাজ্জাকের সমর্থিত প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে হারুনার রশিদ হীরা পরাজিত হন। হীরা আব্দুর রাজ্জাকের আপন খালাতো ভাই। এখানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ তালুকদার সবুজ। এ নির্বাচনে ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান রনি পরাজিত হন। তারা আব্দুর রাজ্জাকের বিরোধী পক্ষ।
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর সংবর্ধনা সম্পর্কে এমপির অনুসারী ধনবাড়ীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি হারুনার রশিদ হিরা বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো গঠিত হয়নি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুইজন কারো সঙ্গে পরামর্শ না করেই এ সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন। এ সংবর্ধনায় আমাদের এমপি ড. আব্দুর রাজ্জাককে জানানো হয়নি। তাই আমরা এ অনুষ্ঠানে যাব না।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা অধ্যাপক মেহেরুল হাসান সোহেল বলেন, চাঁপা আপার সংবর্ধনাকে ঘিরে ধনবাড়ীর দীর্ঘদিনের বঞ্চিত, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা স্বতস্ফূর্তভাবে নিজেদের টাকায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।
ধনবাড়ীর পরাজিত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা মেহেদী হাসান রনি বলেন, এমপি ড. আব্দুর রাজ্জাক সাহেব মধুপুর ও ধনবাড়ীর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। চাঁপা আপার সংবর্ধনা যেন সফল না হয়, সেজন্যে তিনি অনেককেই নিষেধ করছেন। কিন্তু তার কোনো ষড়যন্ত্র আর সফল হবে না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন বলেন, শামসুন নাহার চাঁপা ধনবাড়ীর কৃতী সন্তান। প্রধানমন্ত্রী তাকে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার বিষয়ে এমপি সাহেবকে আমরা একাধিকবার বলেছি। কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেন নাই। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবর্ধনার মাধ্যমে প্রতিমন্ত্রীকে সম্মান জানাবে নেতাকর্মীসহ ধনবাড়ীর সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, শামসুন নাহার চাঁপা কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রতিমন্ত্রী। তার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল যাবে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওই সভায় আমার না যাওয়ার কোনো কারণ নাই।