গোপালপুর প্রতিনিধি: গোপালপুরে চার বছরের এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুকে বিষপান করিয়ে হত্যার পর বাবা-মা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। ওই দম্পতি এখন পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
সোমবার, ২৭ মে ভোররাতে পৌরশহরের থানাব্রিজ সংলগ্ন হেমনগর রোডে হারুন অর রশিদের বাসায় এ ঘটনা ঘটে। তারা ওই বাসার চারতলায় ভাড়া থাকতেন। নিহত শিশুটি ভাদুরিচর গ্রামের মোশারফ হোসেনের পুত্র মাসরুল হোসাইন (৩৫) ও মীরা আফরোজ সাথী(৩০) দম্পতির একমাত্র কন্যা সন্তান ফাউজিয়া শেহতাজ মৃত্তিকা(৪)।
জানা যায়, নগদাশিমলা ইউনিয়নের জামতৈল গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে মাশরুল হোসাইন ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরে জাপান টোব্যাকোর সেলস এন্ড মার্কেটিং পদে চাকরি করতেন। গত ২৮ এপ্রিল সাড়ে ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। পরে এই টাকার জন্য অফিস তাকে চাপ প্রয়োগ শুরু করে।
আর্থিক অনটন ও অফিসের চাপে মাশরুল হতাশ হয়ে পড়েন। রোববার রাতে মাশরুল ও তার স্ত্রী মিরা আফরোজ সিদ্ধান্ত নেন যে, তারা পরিবারের সবাই আত্মহত্যা করবেন। পরে মাশরুল শতাধিক ঘুমের বড়ি ও বিষ কিনে আনেন। এরপর তরল বিষের সঙ্গে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে মেয়েকে পান করায়। বিষপানে মেয়েটি ছটফট করতে থাকলে বাবা বালিশচাপা দিয়ে মেয়েকে হত্যা করেন। পরে স্বামী-স্ত্রী মিলে ওই বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান।
সোমবার ভোরে তার নানি দরজায় এসে ডাকাডাকি শুরু করেন। দরজা না খোলায় নানি বাসার সবাইকে ডেকে এনে ডাকচিৎকার করেও দরজা খুলতে না পেরে পুলিশে খবর দেন।
কর্তব্যরত চিকিৎসক পুলক কান্তি সাহা জানান, স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই ২৪ঘন্টার আশংকামুক্ত বলা যায় না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাদের চিকিৎসা চলছে, তবে এখন কিছুটা সুস্থ।
অভিযুক্ত মাসরুল হোসাইন জানান, মাস খানেক আগে ময়মনসিংহে কোম্পানির টাকা আমার নিকট থেকে ছিনতাই হয়। পরে চাকরি চলে যায় এবং কোম্পানি টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। উপায়ান্তর না পেয়ে রোববার বিভিন্ন ফার্মেসী থেকে ১২০টি ঘুমের ওষুধ ও কীটনাশক কিনে আনি। মধ্যে রাতের পর একমাত্র কন্যাকে ১২টি ঘুমের ঔষধ প্রয়োগ এবং বালিশ চাপায় মৃত্যু নিশ্চিতের পর আমরা (স্বামী-স্ত্রী) ভোররাতে ঘুমের ওষুধ ও কীটনাশক পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করি।
গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক তৈয়ব জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে প্রচুর ঘুমের বড়ি ও বিষসহ মেয়েটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতাবস্থায় স্বামী-স্ত্রী দুজনকে হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করান। তারা এখন শঙ্কামুক্ত। এ বিষয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা ও একটি আত্মহত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।