নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের তারটিয়া এলাকা থেকে নিষিদ্ধ পলিথিনবাহী কাভার্ড ভ্যান জব্দের পর থানায় রেখে ১২ ঘন্টা পর সাংবাদিকদের মধ্যস্থতায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি নিষিদ্ধ পলিথিন আটকের পর অবৈধ সুবিধা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা। আর সচেতন মহলের মধ্যে বইছে সমালোচনার ঝড়। এ কাজে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধেও। এসআই ট্রাক জব্দের বিষয়টি স্বীকার করলেও অন্যান্যরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এ ঘটনায় পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সোমবার দিবারগত রাতে মধুপুর ট্রান্সপোর্টের নামের নিষিদ্ধ পলিথিনবাহী কাভার্ডভ্যান ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের তারটিয়া এলাকায় পৌঁছলে টাঙ্গাইল সদর থানার এসআই মো. বেল্লাল হোসেনের টহল দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই কাভার্ডভ্যানটি আটক করেন।
পরে কাভার্ড ভ্যানে নিষিদ্ধ পলিথিন থাকায় তা জব্দ করে ভোর রাতেই থানায় নিয়ে আসে। এরপর থেকেই শুরু হয় তদবির। কালিহাতীর দুই গণমাধ্যমকর্মী ও টাঙ্গাইলের একজন সাংবাদিক এ কাজে যোগ দেন বলে জানায় সূত্রটি।
সূত্রটি আরও জানায়, ছয়আনী বাজারের আনোয়ার হোসেন নামের আরেক নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবসায়ী এবং কালিহাতীর দুই সংবাদকর্মী ও টাঙ্গাইলের এক সাংবাদিক নিষিদ্ধ পলিথিনবাহী কাভার্ড ভ্যানটির মালামালসহ ছাড়িয়ে নিতে ভোর রাতেই থানা উপস্থিত হন। পরে দেনদরবার শেষে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তা মালামালসহ মঙ্গলবার দুপুরে ছাড়িয়ে নিতে সক্ষম হন।
সূত্রটি আরো নির্দিষ্ট করে জানায়, এ ঘটনায় পুলিশ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেয়। বাকি ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে টাঙ্গাইলের সাংবাদিক ঢাকা অফিসের টিমের কথা বলে ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। অন্য দু'জন পায় বাকী টাকা। টাকার এই অসম ভাগাভাগি নিয়েও মনোমালিন্য হয় বলে নিশ্চিত করে সূত্রটি।
এদিকে ট্রাকটি ছাড়িয়ে নেওয়ার পর থানা পুলিশের ভেতর থেকেই ঘটনাটি জানাজানি হয় সর্বত্র। জানাজানির পর বইতে থাকে ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড়।
এ বিষয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার সাবেক কর্মকর্তা ও পরিবেশ কর্মী সোমনাথ লাহিড়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পরিবেশের জন্য মরণঘাতী এ পলিথিন উচ্চ আদালতে উৎপাদন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহারে নিষিদ্ধ পণ্য। নিষিদ্ধ পণ্য জব্দের পর তা ধ্বংস না করে ছেড়ে দেয়া অতীব গর্হিত কাজ। এ কাজের মাধ্যমে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা চরমভাবে অবজ্ঞা করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানাই।
এ বিষয়ে মধুপুর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির ম্যানেজার মো. কায়ছার বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে আমাদের গাড়িতে এ ধরনের মালামাল বহন করা হয় না।
এ বিষয়ে দিনভর আনোয়ারের দোকান ও তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে দুই সাংবাদিক তাদের সম্পৃক্ততার অস্বীকার করলেও অপর গণমাধ্যম কর্মী বলেন, ভোর রাতে এক সাংবাদিকের সাথে প্রাইভেটকারযোগে মহাসড়কে চা খেতে গিয়েছিলাম। তখন ট্রাক জব্দের কথা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে এসআই বেলালকে অবহিত করলে তিনি অস্বীকার করেন। তিনি আরও বলেন, যে তিন লাখ টাকা লেনদের কথা হচ্ছে, আমি এ বিষয়সহ কোন কিছুই জানি না।
কালিহাতী প্রেসক্লাবের সাংবাদিক ও টাঙ্গাইলের সাংবাদিকের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান।
সদর থানার এসআই মো. বেল্লাল হোসেন জানান, আমি পলিথিনের ট্রাকটি আটক করে থানায় নিয়ে এসেছি। পরে আর কিছু জানি না। সব জানেন ওসি স্যার। স্যারের সাথে আপনারা কথা বলেন।
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. লোকমান হোসেন জানান, এধরণের কোন ট্রাক আটক বা জব্দ করা হয়নি। তবে রাতে মাটিবাহী একটি ট্রাক আটক করা হয়েছিল। থানায় চর্তুদিকে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। থানায় আনার পর সেই ট্রাক ছাড়ার সুযোগ নেই। হয়ত ভুলভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শরফুদ্দীন জানান, সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।