নাগরপুর প্রতিনিধি: ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিকের একজন টাঙ্গাইলের সাব্বির হোসেনসহ জিম্মি সবাইকে যেন দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছে।
জানা যায়, ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে এমভি আব্দুল্লাহ নামক পণ্য বহনকারী জাহাজের ২৩ জন নাবিকের মধ্যে রয়েছেন সাব্বির হোসেন। পিতার নাম হারুন অর রশিদ। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামে।
একমাত্র ছেলের জিম্মির খবর শুনে কাঁদছেন বাবা হারুন অর রশিদ। বুক চাপড়ে কান্না আর বিলাপ করছেন মা সালেহা বেগম।
একমাত্র বোন মিতু আক্তার বিমর্ষবদনে ভাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছেন। জিম্মির খবর পেয়ে স্বজনরাও উদ্বিগ্ন। সাব্বির জলদস্যুদের জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হয়ে তাদের কাছে যেন আবার ফিরে আসতে পারে।
তাদের কান্না থামাতে গ্রামের লোকজন বাড়িতে এসে ভির করছেন। গ্রামের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনরা বাড়িতে এসে শান্তনা দিচ্ছেন। তাদের একটাই দাবি সরকার যেন সাব্বিরসহ সব জিম্মিদের দ্রুত মুক্ত করে আনে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সাব্বির ২০১৪ সালে নাগরপুরের সহবতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর ২০১৬ সালে টাঙ্গাইলের কাগমারি এম এম আলী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। সেখান থেকে পাস করে ২০২২ সালের জুনে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে মার্চেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন সাব্বির।
সাব্বিরের চাচাতো ভাই আহমেদ হোসেন রানা বলেন, সাব্বিররা এক ভাই এক বোন। তিনি অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছেন। বোনের বিয়ে হয়েছে। তার বাবা কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। বর্তমানে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে প্যারাইলাইজড হয়ে শয্যাশায়ী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সাব্বির। তার কিছু হয়ে গেলে তাদের আর চলার উপায় থাকবে না।
সাব্বিরের একমাত্র বোন মিতু আক্তার জানান, ‘আমার ভাই সোমবার (১১ মার্চ) বিকেলে ফেসবুকে আপলোড দিয়েছে যে, বিষুবরেখা অতিক্রম করলাম। মাথা ন্যাড়া করে ছবি আপলোড করেছে। একমাস আগে সে বাড়ি এসেছিল। একদিন বাড়িতে থেকে আবার কর্মস্থলে চলে গেছে।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সকাল থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। দুপুরে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর পেয়ে সবাই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। বাবা-মা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা শুধু কেঁদেই চলেছেন আর বলছেন, আমার ছেলেকে এনে দাও। আমার একমাত্র ভাইয়ের কিছু হলে বাবা-মাকে বাঁচানো যাবে না।’ তিনি অতিদ্রুত তার ভাই সহ সবাইকে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করে আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
এ বিষয়ে সহবত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ মোল্লা বলেন, অপহৃত নাবিক সাব্বিরের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সান্ত্বনা দিয়ে এসেছি। মেরিন একাডেমির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। সাব্বিরসহ অপহৃত নাবিকদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চাই।