নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কল্যাণ বিহারী দাস হত্যার ৪২ বছর পূর্ণ হয়েছে। ১৯৮১ সালের ৯ নভেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে এই ছাত্রলীগ নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও এই হত্যাকাণ্ডের বিচার আজো সম্পন্ন হয়নি। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এই হত্যার বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নিহতের পরিবার এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা জানান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. কামাল হোসেনের পক্ষে ১৯৮১ সনের ৯ নভেম্বর টাঙ্গাইল সদর উপজেলা যুগনী হাটে একটি প্রচার মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় বিএনপির কতিপয় চিহ্নিত দুর্বৃত্ত তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কল্যাণ বিহারী দাসকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। তৎকালীন সরকারের ধর্মমন্ত্রী আব্দুর রহমানের ভাতিজা ও জামাতা লাল মাহমুদ এই হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দেন বলে জানা যায়। ঘটনার দিনই আসামিদের নাম উল্লেখ করে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
কিন্তু তৎকালীন সরকারের মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনরা আসামি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম বাদি হয়ে আদালতে এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে একটি নালিশি মামলা দায়ের করেন। আদালত ঘটনার সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের পর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারী করেন।
আসামি পক্ষ এই মামলা বাতিলে টাঙ্গাইলের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করলে শুনানী শেষে আদালত আবেদন নাকচ করে দেন। পরবর্তীতে আসামিরা জেলা ও দায়রা জজের আদেশের বিরদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা দায়ের করলে হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানীর পর আসামিদের রিভিশন খারিজ করে দেন। এরপর মামলাটি বিচারের জন্য নিম্ন আদালতে পাঠানো হয়।
১৯৮১ সনের নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টাঙ্গাইল শহরের আদালত রোডে কল্যাণ বিহারীদের বাসায় এসে তার বৃদ্ধ মা-বাবাকে সমবেদনা জানান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে এই হত্যার বিচার করা হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাহায্য সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস দেন।
কল্যাণ বিহারী দাসের বড় ভাই প্রবীণ সাংবাদিক অধ্যাপক বিমান বিহারী দাস জানান, সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনা যে আশ্বাস দিয়েছিলেন তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি যত দ্রুত সম্ভব এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
নিহত কল্যাণের বড় বোন টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা শেফালী দাস কল্যাণ বিহারী হত্যার বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান জানান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কল্যাণ বিহারী দাসের স্মরণে আজ জেলা ছাত্রলীগ অফিসে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম জানান, বাংলাদেশের প্রচলিত যে আইন রয়েছে সেই অনুযায়ী আমি কোর্টে চলছিলাম। সে সময় অন্য দল ক্ষমতায় থাকায় মামলাটি এগোতে পারেনি। মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ মামলাটি ফৌজদারী কার্যবিধির আইন অনুসারে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলো। যে কারণে পরবর্তীতে আর বিচার কার্য হয়নি। এর মধ্যে কয়েকজন আসামির মৃত্যু হয়েছে বলে আমি জানতে পেরেছি।