টাঙ্গাইলের প্রতিমা শিল্পীরা সর্বশেষ ব্যস্ত সময় পার করছেন

টাঙ্গাইল সদর দিবস ফিচার বিনোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আর এই উৎসবকে ঘিরে টাঙ্গাইলের শিল্পীরা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আগামী সপ্তাহ থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

 

 

 

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার ১২টি উপজেলায় ১ হাজার ২৮৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। জেলার সদর উপজেলার পূজা মণ্ডপে ২০৭টি, বাসাইলে ৬৫টি, সখিপুরে ৫৩টি, মির্জাপুরে ২৫৬টি, নাগরপুরে ১৩২টি, দেলদুয়ারে ১২৭টি, গোপালপুরে ৫০টি, ভূঞাপুরে ৪০টি, কালিহাতীতে ১৯০টি, ঘাটাইলে ৮১টি, মধুপুরে ৫০টি ও ধনবাড়ীতে ৩৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ১২৪৩টি ও চলতি বছর ১২৮৪টি। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৪১টি মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে।

প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি প্রতিমা তৈরি করতে শিল্পীদের সর্বনিম্ন ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। সর্বোচ্চ তিন-চার লাখ টাকা খরচ হচ্ছে এ বছর। প্রতিমা তৈরির জন্য তাদের ৩ থেকে ৪ ভ্যান মাটি লাগে। এছাড়া খড়, কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা ও ধানের গুড়াসহ বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে প্রতি ভ্যান মাটিতে তাদের খরচ হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, খড়ের জন্য খরচ হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। আর বাকি জিনিসগুলোর জন্য খরচ হয় ৪ থেক ৫ হাজার টাকার মতো। আগের থেকে সব কিছুর দাম বেশি। একটি প্রতিমা তৈরি করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন। প্রতিমা তৈরিতে চার থেকে পাঁচজন শিল্পী একসঙ্গে কাজ করেন।

টাঙ্গাইল পৌরসভার আদালতপাড়া পুজা সংসদ, শ্রী শ্রী কালিবাড়ী টাঙ্গাইল, তারটিয়া প্রতিমা তৈরির কারখানাসহ বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে দেখা গেছে, কেউ দেবীর গায়ে তুলির আঁচড় দিচ্ছেন, আবার কেউ ব্যস্ত প্রতিমার গায়ে কাঁদা মাটির প্রলেপ লাগাতে। শিল্পী নিশি কান্ত পাল প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি জানান, এছাড়াও আরও ৫টি প্রতিমা রঙ করার বাকি আছে। ৭-৮ দিনের মধ্যে এগুলোর কাজও শেষ হবে।

তারটিয়া এলাকার প্রতিমা তৈরির কারিগর বসন্ত পাল বলেন, আমি প্রায় ২০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। এবার ১০টি প্রতিমা তৈরি করেছি। আমার কারখানায় দুই-তিনজন কর্মচারীসহ পরিবারের লোকজন নিয়ে প্রতিমা বানাচ্ছি। বর্তমানে খড়, বাঁশ, মাটি, লোহাসহ সবকিছুর দাম আগের তুলানায় অনেক বেশি। সবকিছুর দাম বাড়ার কারণে আমাদের এখন পোষায় না।

তারটিয়া এলাকার সন্ধ্যা রানী পাল বলেন, আমি পরিবারের কাজকর্ম করে যে সময়টুকু থাকে, আমার স্বামীর সঙ্গে প্রতিমা তৈরি কাজে সাহায্য করি। পঞ্চমীর রাতের আগেই আমাদের প্রতিমার সব কাজ শেষ করতে হবে। এজন্য আমরা এখন খুব ব্যস্ত সময় পার করছি।

দুলাল পাল বলেন, এ বছর ১০টি প্রতিমা তৈরি করেছি। এখন রং ও তুলির কাজ চলছে। মাটির কাজ সব শেষ করছি। এ পর্যন্ত চারটি রং করছি। ছয়টি প্রতিমা বাকি আছে রং করার জন্য। আমরা রাতদিন জেগে কাজ করছি। কাজ করতে গিয়ে আমাদের অন্য কোনো দিকে নজর দেওয়ার সুযোগ নেই। খাওয়া-দাওয়ারও কোনো ঠিক নেই।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার গুণ ঝন্টু জানান, এ বছর জেলার ১২টি উপজেলায় মোট ১ হাজার ২৮৪টি মণ্ডপে পূজা হবে। এ জন্য মন্দিরে বিভিন্ন কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বিভিন্ন দাবি করেছি। প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। প্রতিটি মণ্ডপে আনসার সদস্যরা ডিউটিতে থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ সব মণ্ডপে পুলিশ পাহাড়ায় থাকবে। তিনি আরও বলেন, জেলার প্রতিটি মণ্ডপে নামাজের সময়সূচি টাঙানোর জন্য বলা হয়েছে। কমিটিকে মণ্ডপগুলোতে পূজা চলাকালীন সময় সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও আমাদের পুলিশের মোবাইল টিম সবসময় কাজ করবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *