মির্জাপুর প্রতিনিধি: মির্জাপুর উপজেলার ৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক চলছে নানা সংকটে। ক্লিনিকে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের (সিএইচসিপি) বেতন গত দুই মাস ধরে বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এছাড়া, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ওষুধ সংকটও রয়েছে। সবশেষ ক্লিনিকগুলোতে গত ১৭ মে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। তখন ২৬ প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হলেও বর্তমানে বেশিরভাগ ক্লিনিকে ৫-৭ প্রকার ওষুধ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১৯৯৮ সালে গ্রামে গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়। মির্জাপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে ৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়।
পৌরসভা এলাকার কাঁঠালিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি ফারহানা আশা বলেন, গত জুলাই ও আগস্ট মাসের বেতন আমরা পাইনি। বেতন না পেয়ে চলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। তারপরও আমরা ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
ডোকলাহাটী কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মাহফুজুর রহমান ও ভাওড়া ক্লিনিকের সিএইচসিপি সুমি চৌধুরী বলেন, ক্লিনিকগুলোতে ওষুধ সংকট রয়েছে। তাছাড়া গত দুই মাস ধরে আমরা বেতন পাই না। আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।
ছোট গবরা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি শিলা আক্তার বলেন, বয়স শেষ হয়ে গেছে। সেজন্য অন্য চাকরির সন্ধান করবো সে সুযোগও নেই। কাজেই এখানেই মানুষের সেবা দিচ্ছি। কিন্তু বেতন না পাওয়ায় পরিবারের খরচ মেটাতে পারছি না।
বাংলাদেশ সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশন মির্জাপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও বাংগলা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি স্বপন চৌধুরী বলেন, উপজেলার ৫৪ জন কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা বেতন পেয়ে মা-বাবার ওষুধ কেনা, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারে খরচ বহন করে থাকেন। কিন্তু দুই মাস বেতন বন্ধ থাকায় অনেকেই ধারদেনা করে চলছেন। তাদের বকেয়া বেতন ছাড় দেওয়াসহ সরকারি সুুবিধা পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
মির্জাপুর উপজেলা শাখার সভাপতি ও আজগানা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি সুমন শিকদার বলেন, সারাদেশে প্রায় ১৪ হাজার সিএইচসিপি গত ১২ বছর ধরে একই বেতনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই এ বেতনের ওপর নির্ভরশীল। বেতন বন্ধ থাকায় তারা পরিবার নিয়ে মানবেতন জীবনযাপন করছেন।
মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. ফরিদুল ইসলাম জানান, শুধু মির্জাপুরে নয়; সারাদেশের সিএইচসিপির বেতন বন্ধ রয়েছে। ওষুধ সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুততম সময়ে ওষুধ চলে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।