মধুপুর প্রতিনিধি: মধুপুর পৌরসভাধীন আকাশী গ্রাম থেকে মর্জিনা বেগম (৩০) নামের এক গৃহবধূর অগ্নিদগ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে মধুপুর থানা পুলিশ।
শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর রাত আড়াইটার দিকে জেলার ঘাটাইল পৌরশহরের পশ্চিম পাড়া এলাকায় তার ভাড়া বাসায় এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।
পুলিশ ও তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, অনেক দিন ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য চলায় মধুপুর পৌরশহরের কাজী পাড়ায় ভাড়াটে বাসায় থাকতেন মর্জিনা। কয়েক মাস আগে কাজীপাড়া মহল্লার নাঈম হোসেন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে মর্জিনার সম্পর্ক হয়। তিন সপ্তাহ আগে নাঈম ঘাটাইল পৌরশহরের পশ্চিমপাড়ায় ভাড়া বাসায় মর্জিনাকে নিয়ে তোলেন। এরপর থেকে পরিবার ও স্বামী সেন্টু মিয়ার সঙ্গে মর্জিনার কোনো যোগাযোগ ছিল না। তবে স্বামীর সঙ্গে মর্জিনার ছাড়াছাড়ি হয়নি বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার মধ্য রাতে ডাক চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন দৌড়ে গিয়ে দেখেন মর্জিনার গায়ে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। এলাকাবাসী তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। সে মধুপুর উপজেলাধীন কুড়ালিয়া গ্রামের মজিবরের মেয়ে।
মর্জিনার বাবা মজিবর রহমান জানান, মধুপুর পৌরসভাধীন আকাশী গ্রামের সেন্টু মিয়ার সাথে প্রায় পনেরো বছর আগে তার মেয়ের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে ১০ বছরের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। পারিবারিক কলহের কারণে তিনি স্বামী সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত মধুপুর কাজীপাড়া নামক এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
তিনি আরো জানান, মুঠোফোনে শনিবার রাত ৩টার দিকে এম্বুলেন্স ড্রাইভারের কাছ থেকে জানতে পারেন তার মেয়ে খুব অসুস্থ ময়মনসিংহ মেডিকেলে আছে, পরবর্তীতে সকালে নার্স ফোন করে জানান, সে মারা গেছে। এম্বুলেন্সযোগে লাশ আপনাদের ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। লাশ আমাদের কাছে রেখে এম্বুলেন্স ড্রাইভার সটকে পড়ার পর দেখতে পাই তার শরীর পুরোটাই আগুনে পোড়া।
অগ্নিদগ্ধের কারণে ঘটনাটি রহস্যজনক মনে হওয়ায় মধুপুর থানা-পুলিশ মর্জিনার লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক মোঃ শহীদুল ইসলাম খোকন বলেন, গভীর রাতে মর্জিনাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। তার শরীর মারাত্মকভাবে পুড়ে গিয়েছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
টাঙ্গাইলের গোপালপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুনাদির ইসলাম চৌধুরী জানান, ঘাটাইল থানা-পুলিশ আজ রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ‘তদন্ত সাপেক্ষে রহস্য জানা যাবে।’
মধুপুর থানার এসআই ফখরুল ইসলাম বলেন, মর্জিনার বাবা মজিবর রহমানের ফোন পেয়ে আকাশী গ্রাম থেকে দগ্ধ গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। রবিবার সকালে মর্জিনার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে বলা যাবে। ময়নাতদন্ত শেষে রবিবার সন্ধ্যায় তার জন্মস্থান উপজেলার কুড়ালিয়া গ্রামে বাবার বাড়ির পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।