জুলহাস গায়েন: সখীপুর উপজেলার বড়চওনা ইউনিয়নের কুতুবপুর বাজারটি কলার পাইকারি বাজার হিসেবে এ জেলায় বিখ্যাত। ৫০ বছরের পুরোনো কলার হাটটি এখন সবার মুখে মুখে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২ কোটি টাকার কলা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায় ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। মধুপুর, সখীপুর,ঘাটাইল, কালিহাতীসহ পাহাড়ি এলাকায় কলার আবাদ বেশি হয়। এসব এলাকাতে বিভিন্ন জাতের কলার আবাদ হয়। সাগর কলা, হিম সাগর, সরবি কলা, মিহির সাগর ও অমৃত সাগরসহ নানা জাতের কলা চাষ করেন চাষীরা।
কুতুবপুর বাজারের কলা ব্যবসায়ীরা জানান, উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় কলার হাট এখন সখীপুর উপজেলার কুতুবপুর বাজার। এখানে উপজলোর কুতুবপুর, বড়চওনা, দাড়িপাকা, শ্রীপুর, তৈলধারা, মুচারিয়া পাথার, শালগ্রামপুর, ফুলবাড়িয়া উপজলোর গারোবাজার, ঘাটাইল উপজলোর সাগরদিঘী, জোড়দিঘীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতি শনিবার বিকেল থেকে রবিবার দুপুর ১২টা র্পযন্ত এবং মঙ্গলবার বিকেল থেকে বুধবার দুপুর ১২টা র্পযন্ত কলা আমদানি হতে থাকে। কিন্তু এখন শনিবার ও মঙ্গলবারসহ চারদিন বসে এ হাট। কলাচাষী ও ছোট ব্যবসায়ীরা এ হাটে কলা আমদানি করে থাকেন। এরপর তাদের কাছ থাকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে ঢাকা, ময়মনসিংহ , চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রি করে থাকেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে কুতুবপুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, কলা চাষিরা সাইকেল, ভ্যান, অটো, পিকআপে করে কলার কাঁদি নিয়ে বিক্রি করতে এসেছেন। নানা জাতের এসব কলা কিনতে দূর দূরান্তের ব্যাপারীরাও ভিড় জমিয়েছেন। চাষিদের সাথে দরদাম নিয়ে কথা বলছেন। চাষিদের সাথে দরদামে মিলে গেলে ব্যবসায়ীরা এসব কলা বিভিন্ন পরিবহনে করে নিয়ে চলে যাচ্ছেন রাজধানী ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের নানা প্রান্তে।
কলা চাষিরা বলেন, এ বছর দামটা ভালো পাচ্ছি। প্রতি কাঁদি কলা চারশো থেকে ছয়শো টাকা বিক্রি হচ্ছে। অনান্য বছরের চেয়ে এবছর প্রতি কাঁদি কলা একশো থেকে দুইশো টাকা দাম বেশি। এ বছর কলা চাষিরা কলা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। সার ও কীটনাশকের দাম কম থাকলে চাষিরা কলা বিক্রি করে আরও বেশি লাভবান হতেন।
ব্যাপারীরা জানান, প্রতি কাঁদি কলা দেড়শো থেকে আটশো টাকায় বিক্রি হয়। তবে কাঁদি, স্বাদ ও মানভেদে দাম ওঠানামা করে। ছোট আকারের কলা প্রতি কাঁদি দেড়শো টাকা, মাঝারি আকারের কাঁদি তিনশ টাকা, বড় আকারের কাঁদি সাড়ে চারশো থেকে আটশো টাকায় বিক্রি হয়। এ হাটের অবস্থান মধুপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কে হওয়ায়, যোগাযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। এ হাট দিনে দিনে ব্যবসায়ীদরে কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
কুতুবপুর হাটরে কলার আড়তদার ফজল মিয়া বলনে, প্রতি হাটে এখান থেকে ট্রাকে কলা দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। কলা ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এখানে অসংখ্য আড়ত গড়ে উঠছে।
ইউনুস আলী ভূঁইয়া জানান, প্রতি কাঁদি কলা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থকেে ৫০০ টাকা দরে। কলার কাঁদি ওপর নির্ভর করে দাম কমবেশি হয়ে থাকে। শ্রমিক খরচ ও সাররে এর মূল্য বৃদ্ধিতে আমরা খুব একটা লাভবান হচ্ছি না।
সাগরদিঘী গ্রামের কলাচাষী হানিফ আলী বলেন, এ অঞ্চলের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় কলার হাট। অন্যান্য বাজারের তুলনায় এ বাজারে বেশি কলা বিক্রি হয়। এখানে দামও কিছুটা ভালো পাওয়া যায়। এ কারণে কুতুবপুরে কলার আমদানি বেশি।
হাটকেন্দ্রিক শ্রমিক আব্দুস সামাদ জানান, এই হাটকে কেন্দ্র করে প্রায় ১০০ জন শ্রমিক কাজ করে। এতে জনপ্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা করে পাওয়া যায়। এই হাটের কারণে যে পারিশ্রমিক পাই তা দিয়েই আমাদের পরিবার চলে।
কলাচাষী জহরিুল ইসলাম জানান, এ বছর তিনি সাড়ে চার বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ৩শটি হিসাবে সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে এক হাজার ৫শটি কলা গাছ লাগিয়েছেন। প্রতি বিঘা জমি থেকে অন্তত ৮০ হাজার টাকার কলা বিক্রি হবে । প্রতি বিঘা জমিতে কলা চাষ করতে আমার ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
কুতুবপুর হাট ইজারাদার হানিফ বলেন, এ বাজারে সপ্তাহে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার কলা বেচাকেনা করা হয়। তাছাড়া কুতুবপুর অন্যতম বিখ্যাত কলার বাজার বলে খ্যাতি রয়েছে।
কুতুবপুর বাজার কমিটির সহসম্পাদক আব্দুল কাদের বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেপারিরা কলা কিনতে আসেন।এই বাজারে থাকা খাওয়ার কোনো সমস্যা নাই। ঢাকাসহ আশেপাশের সকল জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় দিন দিন এ হাট জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই হাট আগে সপ্তাহে দুইদিন হাট বসলেও বর্তমানে চারদিন হাট বসে। প্রতি হাটে প্রায় ৭০-৮০ লাখ টাকার কলা বিক্রি হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মণ বলেন, সখীপুরসহ এ অঞ্চলের মাটি কলা চাষে বেশ উপযোগী। ৩০ বছর আগে এ উপজেলায় প্রচুর কলা চাষ হতো। ১০ বছর আগে কলা চাষ কমে যায়। তবে আবার কলা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এ বছর উপজলোয় ৪০০ হক্টের জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। উপজেলার দেড় হাজার মানুষ কলা চাষে সঙ্গে যুক্ত।