সময়তরঙ্গ ডেক্স: টাঙ্গাইল জেলার গর্ব নায়ক অমিত হাসান। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের নায়ক ও খলনায়ক দুই জায়গাতেই যিনি সমান দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। নায়ক অমিত হাসান, তার প্রকৃত নাম খন্দকার সাইফুর রহমান (আজু)। ১৯৬৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল শহরের আদালত পাড়ায় জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর পৈত্রিক নিবাস জেলার মির্জাপুর থানার অন্তর্গত বানিয়ারা গ্রামে। তার মায়ের নাম মালিহা রহমান। কলেজে পড়াকালীন সময়ে তার এক বান্ধবী নাম দেন 'অমিত হাসান' ।
১৯৮৬ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অমিত হাসানের সম্পৃক্ততা। এরপর ১৯৯০ সালে ছটকু আহমেদ পরিচালিত ‘চেতনা’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালী পর্দায় তার অভিষেক ঘটে। তবে মনোয়ার খোকন পরিচালিত ‘জ্যোতি’ সিনেমার মাধ্যমে পান সফলতা। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক ‘উজান ভাটি’, ‘শেষ ঠিকানা’, ‘আত্মসাৎ’, ‘আত্মত্যাগ’, ‘তুমি শুধু তুমি’, ‘জিদ্দী’, ‘ভালোবাসার ঘর’, ‘হিংসা’ ‘জ্যোতি’ ও ‘ভুলো না আমায়’- এর মতো ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র তিনি উপহার দিয়েছেন । এসব চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে মৌসুমী, ,শাহনাজ , শাবনূরও পপি অভিনয় করেছেন।
অমিত হাসান বর্তমানে খলনায়ক চরিত্রে অভিনয়ের প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। ডিজিটাল পদ্ধতিতে নির্মিত এফডিসি কেন্দ্রিক প্রথম চলচ্চিত্র শাহীন সুমন পরিচালিত ‘ভালোবাসার রং’-এ তিনি প্রথমবার খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন। এ ছাড়া কয়েকটি ছবিতে খলনায়কের অভিনয় করে তিনি বেশ প্রশংসিত হয়েছেন।অমিত হাসানের ত্রিশ বছর ক্যারিয়ার পেরিয়ে প্রায় ৩০০ চলচ্চিত্রের অভিনয় করছেন। বর্তমানে নির্মাণেও মনোযোগী হচ্ছেন এই অভিনেতা।
অমিত হাসান অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা হচ্ছে দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘তুমি আছো তুমি নাই’। আগামী ঈদে মুক্তি পাবার কথা রয়েছে শাহীন সুমনের ‘বিদ্রোহী’ এবং শামীম আহমেদ রনির ‘বিক্ষোভ’। এছাড়াও তিনি ব্যস্ত আছেন রকিবুল আলম রকিবের ‘সীমানা’, ‘ইয়েস ম্যাডাম’, সৈকত নাসিরের ‘মাসুদ রানা’ ও অপূর্ব রানা’র ‘যন্ত্রণা’ সিনেমার কাজ নিয়ে।
তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে বাচসাস পুরস্কার - ভালোবাসার রঙ (২০১২) পুরস্কার বিজয়ী হন। নায়ক অমিত হাসান বলেন, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন ব্যবস্থা একটা খারাপ সময় পার করছে। দু-একটা ছবি মাঝে মধ্যে সিনেমা হলের দৃশ্যপট বদলে দেয়। ভাল ব্যবসাও করে। শুধু দু-একটা ছবির ওপর একটা শিল্প তো দাঁড়াত পারে না। আমাদের হল নেই, ছবি নেই, ছবিতে গল্প নেই, বাজেট নেই।
দেশের হাজারো সিনেমা হল এখন শপিং সেন্টারে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। মুমূর্ষু চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের নজরদারি বাড়ুক। সরকার নিজেই বিনিয়োগ করুক সিনেমায়। নিজে আয় করুক, চলচ্চিত্রকর্মী ও শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখুক। মনোযোগ না দিলে শিল্প যেমন সৃষ্টি করা যায় না, তেমনি যথাযথ প্রণোদনা ও দেখভাল না করলে সিনেমার মতো বড় শিল্প মাধ্যম বাঁচানো যাবে না।
নতুন নতুন প্রযোজক আনতে হবে। ভাল গল্পকার ও নতুন অভিনয় শিল্পী তৈরি করতে হবে। সবচেয়ে জরুরীভাবে যেটা দরকার সেটি হচ্ছে সরকারী উদ্যোগে সিনেমা হল তৈরি করতে হবে। সিনেমা বাঁচাতে হলে আগে হল বাঁচাতে হবে।
ভাল ছবি চালাতে দরকার ভাল মেশিন, সাউন্ড সিস্টেম। হলের পরিবেশ ফেরাতে দরকার এয়ারকন্ডিশন, বসার ভাল আসন। সিনেমা বাঁচাতে প্রচুর সিনেমা হল দরকার। মাল্টিপ্লেক্স দরকার। আমাদের দাবি, সরকারী খরচে মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ ও সরকারী ব্যবস্থাপনায় সে সব পরিচালনা করা হোক। ৬৪ জেলায় আধুনিক সিনেমা হল নির্মাণ করতে হবে। বিলুপ্ত সিনেমা হল এবং চলচ্চিত্রের সোনালি দিন ফেরাতে যুগোপযোগী চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে।