কালিহাতী প্রতিনিধি: কালিহাতী উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের আকুয়া গ্রামের এক প্রবাসীর স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ১৭ জুলাই, সোমবার রাতে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
নিহত গৃহবধু বিথি আক্তার উপজেলার লুহুরিয়া গ্রামের মনিরুজ্জামান বাজেলের মেয়ে। স্থানীয়রা জানায়, ৭ মাস পূর্বে উপজেলার লুহুরিয়া গ্রামের মনিরুজ্জামান বাজেলের কন্যা বিথি আক্তারের সাথে একই উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের আকুয়া গ্রামের আব্দুল্লাহ আনসারীর বড় ছেলে প্রবাসী সুমন আনসারীর সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের ৩ মাস পর স্বামী সুমন প্রবাসে চলে গেলে, সৎ শ্বাশুড়ি শাহিনা আক্তার যৌতুকের জন্য নানা অত্যাচার শুরু করে।
তারা জানায়, রবিবার দুপুরে ওই প্রবাসীর স্ত্রী শ্বশুরকে হাটে থেকে শশা কিনে আনতে বলেন। ছেলের বউয়ের কথা মত শ্বশুর শশা কিনে আনলে শ্বাশুড়ি ওই শশা বাহিরে ফেলে দেয়। স্বামীকে নানা বকাবকি করতে থাকে। ছেলের বউ শ্বশুরের পক্ষ নিয়ে কথা বললে শ্বাশুড়ির মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সবাই মিলে রাতের খাবার শেষে শ্বাশুড়ি প্রবাসীর স্ত্রীকে একগ্লাস দুধ খেতে দেয়। শ্বাশুড়ির দেওয়া দুধ খেয়ে প্রবাসীর স্ত্রী ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন।
১৭ জুলাই সোমবার সকালে ঘুম থেকে না উঠলে ডাকাডাকি করার পরও না উঠলে প্রবাসীর স্ত্রীর বাড়িতে ফোন দেয়। ফোন পেয়ে তার বাবার বাড়ির লোকজন এসে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে। পরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার শাররীক অবস্থা অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তারা আরো জানায়, মৃত্যুর পর রাতেই নিহতের বাবার সাথে মীমাংসার জন্য ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সহিদুল ইসলাম, মেম্বার হযরত আলী, আতোয়ার রহমান, মাহমুদুল হক, মিন্টু মিয়া ও ওহাব আলীসহ একাধিক মাতব্বর মিলে দফায়-দফায় বৈঠক করেন। মীমাংসা না হওয়ায় একপর্যায়ে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতের দাদী হোসনেয়ারা ও ফুপু মর্জিনা আক্তার জানান, বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে সোনার গহনা দেওয়ার কথা ছিল। সেই সোনার গহনা দিতে একটু সময় লাগায় তার সৎ শ্বাশুড়ি দুধের সাথে বিষ মিশিয়ে আমার নাতিকে মেরে ফেলেছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতিবেশী জানান, ঘটনার পরপরই তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে এ ঘটনা ঘটতো না। তারা আরো জানান, তাকে উদ্ধার করতে দরজা ভাঙার প্রয়োজন হলে শ্বাশুড়ি বাঁধা দিয়ে বলে এটা অনেক দামি দরজা, এটা ভাঙা যাবে না। অন্য কোন উপায়ে তাকে বের করার কথা বলে। স্থানীয় ইউপি সদস্য সহিদুল ইসলাম গভীররাতে দফায়-দফায় বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা বৈঠকের কথা স্বীকার করেন।
কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ মোল্লা আজিজুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ১৮ জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করেন। এ বিষয়ে মেয়ের পরিবার একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।