ভূঞাপুর প্রতিনিধি: ভূঞাপুর উপজেলায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে যমুনা নদীতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আশঙ্কাজনকহারে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে ব্যাপক আকারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে বসত-ভিটা, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ, মন্দির ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা বিলীন হচ্ছে নদী গর্ভে। নদীপাড়ের ভাঙন কবলিত মানুষ এতে করে দিশেহারা পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

ভূঞাপুরের ভয়াবহ ভাঙনের শিকার শতশত পরিবার দিশেহারা হয়ে এমন অবস্থায় ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবিতে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব-ভূঞাপুর-এলেঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কে উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা বাসস্ট্যান্ড মোড়ে এই আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রায় ৩ ঘণ্টা অবরোধ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সোমবার (১০ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯ টায় এ অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়ে বেলা প্রায় ১২ টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। পরে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবরোধটি তুলে নেয়।

এরআগে খবর পেয়ে সকাল ১১টার দিকে নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন মন্ডল ও স্থানীয় কয়েকটি এলাকার ইউপি সদস্যরা মানববন্ধনে আসেন। পরে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ঘটনাস্থলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বেলাল হোসেন উপস্থিত হন। তিনি তাৎক্ষণিক ভাঙন কবলিত এলাকায় আরও দ্রুত সময়ের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেন। অবরোধের ফলে প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।

পাশের গ্রামের বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব সোনা মন্ডল ও শফিকুল বলেন, গত প্রায় একমাস থেকে এই এলাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। আমাদের বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীতে ভাঙনে বিলীন হয়েছে। আমরা এ এলাকার অসংখ্য পরিবার নিয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছি। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজ নিজ বাড়ি রক্ষায় তবদির করে জিওব্যাগ ফেলছে। এনিয়ে কিছু বলাও যায় না। তাই আপাতত জিওব্যাগ ফেলাসহ এলাকার ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

নিকরাইল পরিষদের ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন মন্ডল বলেন, প্রতিবছর পাটিতাপাড়া, মাটিকাটা, কোনাবাড়ি, পলশিয়া, দোভায়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা যায়। এবারও ব্যাপকহারে নদীর তীর ভাঙছে। যার ফলে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে এবার অসংখ্য ঘরবাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙনরোধে দ্রুত সময়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা না হলে অচিরেই নদীপারের ওই গ্রামগুলো গিলে ফেলবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বেলাল হোসেন বলেন, ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করছিল উত্তর পাটিতাপাড়া এলাকার ভাঙন কবলিত লোকজন। এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে তাৎক্ষণিক ভাঙনরোধে আরও দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া ও ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিলে তারা অবরোধ তুলে নেন। যারা বসতভিটা ও ঘর-বাড়ী হারিয়েছে তাদের তালিকা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া বিষয়টি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, যমুনা নদী থেকে সারা বছরই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের মধ্যে গোবিন্দাসী, নিকরাইল, গাবসারা ও অর্জুনা ইউনিয়নে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়। এতে প্রতি বছরই শতশত বসত-ভিটা, ফসলি জমি, মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা বিলীন হয়ে যায়। এতে দিশেহারা ও নিঃস্ব হন নদীপাড়ের শতশত মানুষ। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বারবার আশ্বাস দিলেও আজো তা বাস্তবায়ন হয়নি।