সময়তরঙ্গ ডেস্ক : টাঙ্গাইলের করটিয়ার জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নী ১৯২৬ সালে তাঁর নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন সা'দত কলেজ । তাঁর দাদা সা'দত আলী খানের নামে তিনি এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা অখণ্ড বাংলায় কোনো মুসলিম জমিদারের গড়া প্রথম কলেজ । তাই এটি খ্যাতি পায় 'বাংলার আলীগড়' নামে । এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন ইবরাহীম খাঁ ।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে টানা ২১ বছর তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । এ জন্যই ইবরাহীম খাঁ 'প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ' নামে সারা দেশে পরিচিতি পান । তাঁর হাতেই কলেজটি বিকশিত হয়। টাঙ্গাইল শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে ঢাকা- টাঙ্গাইল সড়কের পাশে কলেজটি অবস্থিত । প্রতিষ্ঠার ১২ বছরের মধ্যেই চালু হয় স্নাতক শ্রেণি । কলেজের বর্তমান মূল ভবনটির ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক । ১৯৩৯ সালে স্থাপন করা এই ভবনেই এখনো চলছে কলেজের মূল কার্যক্রম ।
ইবরাহীম খাঁর পর অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আরও অনেক গুণী শিক্ষাবিদ । তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রখ্যাত লোকগবেষক তোফায়েল আহম্মেদ । ষাটের দশকে তাঁর হাতেই এই কলেজে চালু হয় স্নাতক সম্মান কোর্স । পরে ১৯৭৪ সালে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হয় । ১৯৭৯ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয় ।
বর্তমানে এ কলেজে ১৮টি বিভাগে স্নাতক সম্মান এবং ১৫টি বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পাঠদান করা হয় । এ ছাড়া স্নাতক (পাস) কোর্স রয়েছে । ১৯৯৬ সালে এ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণি তুলে দেওয়া হয় । বর্তমানে কলেজে ছাত্রসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার ।
এ কলেজে যাঁরা শিক্ষকতা করেছেন, তাঁদের মধ্যে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বাবা আজিম উদ্দিন আহমেদ, নাজির আহমেদ (হিসাববিজ্ঞানের বহু বইয়ের লেখক), বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি মাহবুব সাদিক, কবি সাযযাদ কাদির, ছড়াকার শফিক ইমতিয়াজের নাম উল্লেখযোগ্য ।
কলেজের শিক্ষার্থীরা বরাবরই ছিলেন রাজনীতি সচেতন । মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রয়েছে তাঁদের অনন্য ভূমিকা । প্রয়াত নাট্যকার সেলিম আল দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের একাধিকবার নির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি খন্দকার মো. ফারুক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রয়াত প্রধান প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফেরদৌস হোসেন, কবি মাহমুদ কামাল, জাহাঙ্গীর ফিরোজসহ বহু কৃতী শিক্ষার্থী নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ।
সরকারি সা'দত কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত । কলেজের সুবিশাল মূল ভবনটি ছাড়াও রয়েছে দ্বিতল লাইব্রেরি ভবন । এই লাইব্রেরিতে হাতে লেখা কোরআন শরিফ, হাতে লেখা শাহনামাসহ ২৮ হাজার ৩০০ বই রয়েছে । এ ছাড়া ক্যাম্পাসে তিনটি ছাত্রাবাস, অধ্যক্ষের ভবন, শহীদ মিনার, বিশাল খেলার মাঠ, মসজিদ, দুটি পুকুর, ক্যানটিন, ডাকঘর, চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে ।
এই কলেজে এসেছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম । তাঁর স্মৃতিতে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে নজরুল কুটির নামে একটি বিশ্রামাগার । কলেজে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, গার্লস ইন রোভার, রেড ক্রিসেন্ট, রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধনের কার্যক্রম রয়েছে । এ ছাড়া শিল্পলোক, আবৃত্তি সংসদ, ডিবেটিং ক্লাবসহ কয়েকটি সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক সংগঠন সক্রিয় আছে ।
ছাত্র-শিক্ষকদের পরিবহনের জন্য পাঁচটি বাস ও একটি মাইক্রোবাস রয়েছে । কলেজের বর্তমানে অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন প্রফেসর সুব্রত নন্দী । তিনি বলেন,' প্রায় শত বছর আগে নিভৃত পল্লিতে এই কলেজ স্থাপনের মধ্য দিয়ে দরিদ্র সাধারণ মানুষের দুয়ারে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল । এ অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে এ কলেজের ভূমিকা অপরিসীম । এ কলেজ অনেক গুণী মানুষ তৈরি করেছে । কলেজের শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে ।'